খেজুর গুড়ের জন্য কোন জেলা বিখ্যাত
খেজুরের গুড়ের জন্য বিখ্যাত কোন জেলা
৯ই এপ্রিল ২০২৫ বুধবার
ছবি সংগৃহীতদেশের কোন জেলার খেজুরের গুড় দেশ বিখ্যাত জানেন কি?
খেজুরের গুড় এর জন্য বিখ্যাত রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, যশোর। যশোর শুধু দেশ বিখ্যাত নয়,পৃথিবীত বিখ্যাত ও বলা চলে। যশোরের খেজুরের গুড় এ যেন এক আবেগের নাম!
বর্তমানে পিওর গুড় চেনা এবং চিনে কেনা এ যেন এক যুদ্ধ সমান কঠিন কাজ। খেজুরের গুড় মূলত শীতকালে পাওয়া যায় । এর অনেক পুষ্টি উপাদান হয়েছে এবং অনেক গুনাগুন রয়েছে যা আমরা অনেকেই জানিনা। খেজুরের গরুর নানান পুষ্টি উপাদানের সমৃদ্ধ।
বাংলাদেশের মধ্যে শুধুমাত্র যশোরের খেজুরের গুড় সারা বিশ্বে বিখ্যাত। খাঁটি খেজুরের গুড় চেনার অনেক উপায় রয়েছে। বর্তমানে কিছু অসাধ্য ব্যবসায়ী গুড়ের সাথে ভেজাল মিশিয়ে খাঁটি গুড় বলে বিক্রি করে থাকে।
তবে যারা সত্যিকার অর্থে খাঁটি খেজুরের গুড় তৈরি করেন তারা কখনোই ভেজাল মিশিয়ে গরু তৈরি করেন না।
খেজুর গুড়ের পুষ্টি উপাদান
খেজুরের গুড়ের রয়েছে নানান পুষ্টি উপাদান। যা আমাদের অনেকেরই অজানা। খেজুরের গুড় খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। খেজুরের গুড় মূলত শীতকাল ছাড়া অন্য কোন সময় পাওয়া যায় না, এটি তৈরি হয় খেজুর গাছের বাকল থেকে। শীতকালে গাছিরা খেজুর গাছের ছাল ছিলে তাতে নলা বসিয়ে দেয়। এতে হাড়ি টাঙ্গানো থাকে, সারারাত হাঁড়িতে রস জমা হয় এবং সেটি জাল দিয়ে পরে গুরে পরিণত করা হয়। খেজুরের গুড় দুই ধরনের হয়ে থাকে, একটি নলেন গুড় বা লালিগুর এবং অন্যটি পাটালি গুড় বা শক্ত গুড়।
খেজুর গুড়ের পুষ্টি উপাদান সমূহ -
•খেজুরের গুড়ে প্রায় ৩৮৩ ক্যালরি
•ফ্রুক্টোজ ১০ গ্রাম
•প্রোটিন ০ দশমিক ৪ গ্রাম
•চর্বি বা ফ্যাট শূন্য দশমিক ১ গ্রাম,
•আয়রন ১১ মিলিগ্রাম,
•ম্যাগনেশিয়াম ৭০-৯০ মিলিগ্রাম,
•পটাশিয়াম ১ দশমিক ৫৬ মিলিগ্রাম, •ম্যাংগানিজ শূন্য দশমিক ২ থেকে শূন্য দশমিক ৫ মিলিগ্রাম
•ভিটামিন এ, সি, ই, ক্যালসিয়াম, জিংক, ফসফরাস ও কপার থাকে।
খেজুরের গুড় চেনার উপায়
খেজুরের গুড়কে শীতের মিঠাই বলা হয় এর কারণ মূলত এই গো শীতকালেই পাওয়া যায়। শীতকাল কে পিঠাপুলির মাস বলা হয়ে থাকে, এই সময়ে নতুন খেজুরের গুড়ের রস মাগুর দিয়ে নানা রকম পিঠা তৈরি করা হয়। আমাদের দেশে প্রায় সব জেলাতেই খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরি করা হয়। তবে খেজুরের গুড়ের জন্য যশোর জেলা বিখ্যাত।
অনেক সময় দেখা যায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী খেজুরের গুড়ের সাথে ভেজাল গুড় মিশিয়ে তা খাটি গুড় বলে বিক্রি করে। খাঁটি খেজুরের গুড় চেনার কিছু উপায় রয়েছে।
•খেজুরের গুড় প্রাকৃতিকভাবেই মিষ্টি হয়। বাড়তি চিনি মেশালে এর রঙ ও স্বাদে প্রভাব পড়ে।
•খেজুরের গুড়ের পাটালির রঙ গাঢ় লাল বা কালচে লাল হয়। চিনি মেশানো গুড় কিছুটা সাদা হয়ে যায়। রাসায়নিক ও ফিটকিরি মেশানোর কারণেও গুড়ের রঙ সাদা হতে পারে।
•গুড় দেখতে উজ্জ্বল হয় না। চকচকে ধরনের রঙ বা স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ হলে সেই গুড় খাঁটি নয়।
•চিনি মিশিয়ে তৈরি পাটালি খুব শক্ত হয়। বিশেষ করে গুড়ের দুই ধার যদি অতিরিক্ত শক্ত ও ধারালো হয় তবে সেটা না কিনলেই ভালো করবেন।
•পাটালির ভেতরের অংশ রসালো হয়। তাই কেনার আগে ভেঙে দেখুন। যদি শুকনো মনে হয় তবে কিনবেন না।
•এক গ্লাস পানিতে গুড়ের টুকরা ফেলুন। ধীরে ধীরে গলে গেলে বুঝবেন গুড় খাঁটি। নিচে জমে গেলে সেটাতে ভেজাল রয়েছে।
খেজুর গুড় খেলে কি ওজন বাড়ে
অনেকেই মনে করে খেজুরের গুড় মিষ্টি বলে এটি খেলে ওজন বাড়তে পারে। তবে এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল বরং খেজুরের গুড় খেলে ওজন কমতে সাহায্য করে।
খেজুর গুড়ে রয়েছে ফসফরাস, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়ামজাতীয় খনিজ উপাদান। যারা নিয়মিত এক চামচ খেজুরের গুড় খান , তারা পাবেন এ গুড়ের নানান উপকারিতা। খেজুরের গুড় ওজন কমাতে দারুণ কাজ করে। যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে, তারা নিয়মিত ডায়েটে রাখতে পারেন এক চামচ খেজুরে গুড়।
খেজুরের গুড় খেলে কি ডায়াবেটিস বাড়ে
খেজুরের গুড়ের গুনাগুন অনেক। এটি মিষ্টি তবে এটি খেলে যে ডায়াবেটিকস হয় তা না। ডায়াবেটিকস হওয়ার কিছু কারণ রয়েছে। শুধু যে মিষ্টি জাতীয় জিনিস বা চিনি গুড় খেলে ডায়াবেটিস হয় এটা ঠিক না।
ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্যতালিকায় গুড় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে, তবে এটি খুব কম পরিমাণে খাওয়া উচিত । রক্তে শর্করার মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা এবং রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে কম গ্লাইসেমিক সূচকযুক্ত খাবারের সাথে গুড় মিশিয়ে খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
খেজুর গুড়ের উপকারিতা
আমরা জানি খেজুরের গুড় অনেক উপকারী। তবে এ সম্পর্কে সঠিক ধারণা অনেকেরই নেই যে এটা আমাদের জন্য কতটা উপকারী। শীতকাল মানেই খেজুরের গুড়ের মৌসুম আর সারা বছরে শুধু শীতকালেই খেজুরের গুড় পাওয়া যায়। এগুলো খেলে আমাদের অনেক রকম উপকার পাওয়া যায়। খেজুর গুলোর উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক -
•ঠান্ডা জনিত সমস্যা দূর করে
•খেজুরের গুড় ওজন কমাতে সাহায্য করে
•হজম শক্তি বাড়ায়
•আয়রনের ঘাটতি কমায়
•লিভার ভালো রাখতে সাহায্য করে
•যাদের শ্বাসকষ্ট রয়েছে তাদের শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
•ত্বক ভালো রাখে
•প্রসাবের ইনফেকশন দূর করতে সাহায্য করে
খেজুরের গুড়ের অপকারিতা
খেজুরের গুড়ের যেমন উপকারিতা রয়েছে এমন অপকারিতা রয়েছে। অতিরিক্ত কোনো কিছুই যেমন ভালো না ঠিক তেমনি অতিরিক্ত খেজুরের গুড় খাওয়াও শরীরের জন্য ভালো না। খেজুরের গুড়ের অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক -
বাড়াতে পারে ওজন প্রতি ১০০ গ্রাম গুড়ে আছে ৩৮৫ ক্যালরি, তাই যারা ওজন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় আছেন গুড় তাদের জন্য নয়। সামান্য পরিমাণে খাওয়া হয়ত সমস্যা হবে না। তবে অতিরিক্ত খেলে তা ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। এতে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণও বেশি, যা বেশি ওজনধারীদের জন্য অসুবিধার কারণ হতে পারে।
যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তারা খুব অল্প পরিমাণে গুড় খেলেই ভালো। অতিরিক্ত খেজুরের গুড় ডায়াবেটিসের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।
লেখকের মন্তব্য
আশা করি আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা সকলে খেজুরের গুড়ের জন্য কোন জেলা বিখ্যাত তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ মতামত আমাদের জানানোর থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন।
আমাদের আজকের পোস্টটি শেয়ার করার মাধ্যমে আপনার পরিবার এবং পরিজনের সকলকে খেজুর গুণের পুষ্টি উপাদান এবং কোন জেলা খেজুর গুড়ের জন্য বিখ্যাত সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যগুলো জানার সুযোগ করে দিন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url