জাহান্নামের সবচেয়ে নিম্ন শাস্তি সম্পর্কে বর্ণণা
জাহান্নামের সবচেয়ে নিম্ন শাস্তি সম্পর্কে বর্ণণা
২৪ শে এপ্রিল বুধবার ২০২৪
আমাদের সবার একদিন বিচার হবে।তখন আমাদেরকে বিচার করে মহান আল্লাহ তায়ালা দুই দলে ভাগ করবেন একটা জান্নাতি আরেকটা জাহান্নামি। জাহান্নম হলো সবচেয়ে ভয়ংকর। জাহান্নামের সবচেয়ে নিম্ন শাস্তি হলো পায়ে আগুনের জুতা পরানো।এটা পরালে মাথার মগজ টগবগ করেশরীলে খুব অশান্তি হয়।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন জাহান্নামের সবচেয়ে হালকা আযাব দেওয়া হবে আবু তালেবকে, সে এক জোড়া জুতা পড়ে থাকবে, আর এর ফলে তার মস্তিষ্ক বিগলিত হয়ে পড়তে থাকবে। নোমান বিন বাশির (রাঃ) খোৎবারত অবস্থায় বললেনঃ আমি রাসুল্লাহ (সঃ) কে বলতে শুনেছিঃ কেয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্যে সবচেয়ে কম শাস্তি হবে ঐ ব্যক্তির, যার পায়ের নিচে আগুনের ২টি অঙ্গার রাখা হবে, যার ফলে তার মস্তিষ্ক গলে গলে পড়তে থাকবে। [মুসলিম,কিতাবুল ঈমান]
জান্নাতবাসী হওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক না করা। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর চাচা আবু ত্বালেব এর মৃত্যু মুশরিক অবস্থায় হয়েছিল। তবে রাসূল (ছাঃ)-এর কারণে জাহান্নামীদের মধ্যে তার শাস্তি সর্বাপেক্ষা সহজতর হবে। ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘জাহান্নামীদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সহজতর শাস্তি হবে আবু ত্বালেবের। তাঁর দু’পায়ে দু’খানা আগুনের জুতা পরানো হবে। এতে তার মাথার মগজ ফুটতে থাকবে’ (বুখারী হা/৬৫৬২, মুসলিম হা/২১২, মিশকাত হা/৫৬৬৮)।
তিনি বলেন, যদি আমি না হ’তাম (অর্থাৎ শাফা‘আত না থাকত), তাহ’লে তিনি জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকতেন। অতঃপর আমি তাকে নিম্নস্তর থেকে টাখনু পর্যন্ত উঠিয়ে আনি’ (মুসলিম হা/২০৯)। নিঃসন্দেহে এটি ছিল রাসূল (ছাঃ)-এর বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা (আলোচনা দ্রঃ সিলসিলা ছহীহাহ হা/৫৫)।
জাহান্নামের পরিধি ও প্রকৃতি এবং তার আয়তন ও গভীরতাঃ-
(১) জাহান্নাম ওয়াল বেষ্টিত আগুনের গৃহঃ
এ প্রসঙ্গে হযরত আবু সায়ীদ খুদরী (রাঃ) রেওয়ায়াত করেন,
عن ابی سعید الخدری ص عن النبی ﷺ لسرادق النار اربعۃ جدر۔ کثف کل جدار مسیرۃ اربعین سنۃ۔ (الترمذی)
অর্থঃ “হযরত আবু সায়ীদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, জাহান্নাম চারদিকে দেওয়াল দ্বারা বেষ্টিত জায়গা। প্রত্যেক দেওয়ালের পুরুত্ব হবে এত মোটা যে, তা অতিক্রম করতেই চল্লিশ বৎসর লাগবে”। (তিরমিযি শরীফ)।
দেওয়াল এত মোট হওয়ার কারণ হলো- তা যেন আগুনের উত্তাপে ফেটে না যায়। দেওয়াল যদি এত মোটা হয়, তাহলে ভিতরের জায়গা যে কত বড় হতে পারে- তা আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুলই ভাল জানেন। কেননা, রাসুলে করিম (ﷺ) নিজ চোখে তা দেখে এসেছেন। সুতরাং তাঁর বর্ণনা চাক্ষুস বর্ণনা।
(২) জাহান্নামের আগুনের ভয়াবহতা,
عن ابی ھریرۃ عن النبی ﷺ اوقد علی النار الف سنۃ۔ حتی احمرت۔ ثم اوقد علیھا الف سنۃ۔ حتی ابیضت۔ ثم اوقد علیھا الف سنۃ۔
حتی اسودت فھو سودأ مظلمۃ۔ رواہ الترمذی (مشکوۃ صفۃ النار)
অর্থঃ “হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত- তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন- “জাহান্নামের আগুনকে তিনবার উত্তপ্ত করা হয়েছে। প্রথমে একহাজার বছর উত্তপ্ত করার পর তার রং হয়েছে লাল বর্ণের। তারপর আরো একহাজার বছর উত্তপ্ত করার পর তার রং হয়েছে সাদা বর্ণের।তারপর পুনরায় আরো একহাজার বছর উত্তপ্ত করার পর তার রং হয়েছে একদম কলো ও অন্ধকারময়”। (তিরমিযি সূত্রে মিশকাত)।
ব্যাখ্যাঃ اوقد علی النار শব্দটি মাযি মজ্হুলের সীগা। এর দ্বারা অতীতকাল বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ- অতীতকাল থেকেই জাহান্নাম বিদ্যমান আছে। ইহাই আহ্লে সুন্নাতের আক্বিদা। কিন্তু মো’তাযিলাসহ অন্যান্য আহ্লে বিদ্আত ফের্কাসমূহ জাহান্নামের বর্তমান অস্তিত্বকে অস্বীকার করে। তারা ভ্রান্ত ও বাতিল। (সূত্র: মিরক্বাত শরহে মিশকাত)
(৩) দুনিয়ার আগুন জাহান্নামের আগুনের ৭০ ভাগের এক ভাগ
عن ابی ھریرۃ ان رسول اللّٰہ ﷺ قال: نارکم جزاء من سبعین جزأ من نار جھنم۔ قیل: یا رسول اللّٰہ ان کانت الکافیۃ ؟ قال: فضلت علیھن بتسعۃ وستین جزأ۔ کلھن مثل حرھا۔ متفق علیہ۔
অর্থঃ “হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত-নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন- “তোমাদের দুনিয়ার এই আগুন জাহান্নামের আগুনের ৭০ ভাগের ১ ভাগ মাত্র। আরয করা হলো- ইহাই কি যথেষ্ঠ? হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকিদের সাথে জোর দিয়ে এরশাদ করলেন-
দুনিয়ার সর্ব প্রকার আগুনের সমষ্টির উপরে জাহান্নামের আগুন ৬৯ গুন বেশী উত্তপ্ত ও প্রাধান্য বিস্তারকারী। দোযখের আগুনের ৭০টি উত্তাপের মধ্যে প্রত্যেকটির উত্তাপের পরিমান হবে দুনিয়ার সর্বপ্রকার আগুনের সমান”। (বুখারী ও মুসলিম এর শব্দাবলীর ঐক্য)।
ব্যাখ্যাঃ দুনিয়ার আগুনের উত্তাপ কত ডিগ্রী পর্য্যন্ত বাড়ানো সম্ভব- তা বিজ্ঞানীরাই ভাল বলতে পারবে। এ রকম শত প্রকারের আগুন রয়েছে। সবগুলোর উত্তাপ একসাথ করলে জাহান্নামের আগুনের ৭০ ভাগের ১ ভাগ হবে।
এ কথার দ্বারা অনেকের মতে নবী করীম (ﷺ) জাহান্নামের আগুনের উত্তাপের আধিক্য বুঝিয়েছেন। হুবহু পরিমান উদ্দেশ্য নয়। যখন হুযুরﷺ) কে পুনরায় প্রশ্ন করা হলো- ইহাই কি শেষ কথা? হুযুর (ﷺ) বল্লেন- দুনিয়ার যাবতীয় আগুনের সম্মিলিত উত্তাপ হলো জাহান্নামের ৭০ ভাগের এক ভাগের সমান। জাহান্নামের আগুনের পরিমান ৭০ী৭০ = ৪৯০ গুণ বেশী হলে তার সম্মিলিত উত্তাপ কী পরিমান হতে পারে- তা সহজেই অনুমেয়।
(৪) দুনিয়ার আগুনকে সত্তরবার সাগরের পানিতে ভিজিয়ে ঠান্ডা করা হয়েছে
وسئل ابن عباس عن نار الدنیا مم خلقت؟ قال: من نار جھنم۔ غیر انھا اطفئت بالمأ سبعین مرۃ ۔ ولولا ذلک۔ ما قربت لانھامن نار جھنم۔ التذکرۃ صف ۴۳۰
অর্থঃ “হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) কে দুনিয়ার আগুনের সৃষ্টি ও তার উত্তাপ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি বল্লেন- জাহান্নামের আগুন থেকেই দুনিয়ার আগুন সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে তা পানি দিয়ে ৭০ বার ধুয়ে ঠান্ডা করা হয়েছে। তা না হলে দুনিয়ার আগুনের কাছে কেহই যেতে পারতো না। কেননা, ইহা জাহান্নাম থেকে সৃষ্ট”। (আল্লামা কুরতুবী কৃত আত্ তাযকিরাহ ৪৩০ পৃষ্ঠা)।
পরিশেষে বলা যায় যে, আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হতে বাচতে হলে মহান আল্লাহ তায়ালার বিধান মানতে হবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url