রোজাদারদের যে হারাম কাজগুলো করা যাবে না
রোজাদারদের যে কাজগুলো করা হারাম ও মাকরুহ
৪ এ এপ্রিল ২০২৪ শুক্রবার
রোজা হলো বিশ্ব মুসলিমদের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নেয়ামতসরুপ। রোজা মুমিনদেরকে সংযম হতে সেখায়।এই রোজার মাসে মহান আল্লাহ তায়ালা রহমত মাগফেরাত ও নাজাতের দরজা খুলে দেয়। এ মাসে অন্যান্য মাসের থেকে ৭০গুন সওয়াব বেশি কষ্ট পাওয়া যায়। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে গীবত করতে নিষেধে করেছেন। তিনি বলেছেন: তোমরা একে অপরের গীবত করো না। তোমাদের মধ্যে কী কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে?[ সূরা আল হুজরাত, আয়াত নং ১২]
রোজাদার মন্দ ও খারাপ বাক্য উচ্চারন করা নিষিদ্ধ, করা হয়েছে। আল্লাহ নির্দেশিত কোন কাজে সীমালঙ্গন করা যাবে না , কারো দোষ চর্চা করা যাবে না। চোগুলখুলি করা যাবে না। কেননা এসব গুনাহের কারনের রোজা ভেঙ্গে না গেলেও রোজার সাওয়াব কমে যায়।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কিছু রোজাদার এমন যারা শুধু ক্ষুধার্ত থাকা ছাড়া আর কোন কিছু লাভ করে না।হাদিসটি থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান, রোজা শুধু ক্ষুধার্ত থাকার নাম নয় বরং সব ধরনের মন্দ কথা ও কাজ ছেড়ে দেয়ার নাম রোজা।
দোযাহানের বাদশাহ নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) অপর হাদিসে বলেছেন: যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও বদ আমল বর্জন করে নাই, তাহলে তার পানাহার ছেড়ে রোজা রাখার দরকার নেই। কেননা এত রোজাদার আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন বিনিময় পাবে না।
সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবী হযরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: তোমাদের কেউ যেন রোজা রাখা অবস্থায় কোন খারাপ কাজ না করে। যদি কেউ তার সাথে ঝগড়া করতে আসে তবে সে যেন বলে আমি রোজাদার।
রোজা রেখে যে কাজগুলো করা যাবে না বা মাকরুহ সেগুলো ১২টি নিম্নে বর্ণণা জরা হলোঃ-
১. কানের হেফাজতআমাদের করতে হবে।কানে হেডফোন রেখে করারোজা গান-বাজনা, গিবত, পরনিন্দা ও অশ্লীল কথাবার্তা শোনা থেকে বিরত থাকতে হবে।
২. খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকা অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে হবে। যেমন—হাত-পা, চোখ কান ইত্যাদিকে গুনাহ ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে হবে।
৩. সেহরি ও ইফতারে হারাম খাবার পরিহার করাইমাম গাজালি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘যে ব্যক্তি সারাদিন রোজা রেখে হারাম মাল দ্বারা ইফতার করে, সে যেন একটি অট্টালিকা নির্মাণ করে, আর একটি শহর ধ্বংস করে।’
৪. অন্তরকেও গুনাহ থেকে বিরত রাখারোজা রেখে গুনাহের কাজের কল্পনা করা, পেছনের গুনাহের কথা স্মরণ করে স্বাদ গ্রহণ করা, অহঙ্কার, হিংসা, কু-ধারণা ইত্যাদি থেকে অন্তরকে হেফাজত করা।
৫. মুখের হেফাজত করামিথ্যা, গিবত, পরনিন্দা, অশ্লীল কথাবার্তা ও ঝগড়া থেকে বিরত থাকা চাই। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি রোজা অবস্থায় মিথ্যাচার ও মন্দ কাজ ত্যাগ করেনি, তার পানাহার ত্যাগে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (বুখারি ১৯০৩)অন্য এক হাদিসে এসেছে, ‘রোজা অবস্থায় তোমাদের কেউ যেন অশ্লীল কথা না বলে এবং শোরগোল, হট্টগোলে লিপ্ত না হয়। যদি কেউ তার সঙ্গে গালিগালাজ বা মারামারি-কাটাকাটিতে লিপ্ত হতে চায়, তবে সে (অনুরূপ আচরণ না করে) বলবে, আমি রোজাদার।’ (সহিহ বোখারি : ১৯০৪)
বোঝা গেল, রোজা অবস্থায় মারামারি ও ঝগড়াঝাটি তো দূরের কথা, শোরগোল করাও রোজার আদব পরিপন্থী। অতএব, জবানকে এসব থেকে বিরত রেখে সর্বদা জিকির-আজকার ও কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে তরতাজা রাখতে হবে।
৬. রোজা অবস্থায় শরীর থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে ইনজেকশন ইত্যাদির মাধ্যমে এ পরিমাণ রক্ত বের করা মাকরুহ, যার দ্বারা রোজাদার খুব দুর্বল হয়ে যায়।
সাবিত আল বুনানি (রহ.) বলেন, হজরত আনাসকে (রা.) জিজ্ঞাসা করা হলো রোজা অবস্থায় শিঙ্গা লাগানোকে কি আপনারা মাকরুহ মনে করতেন? তিনি বলেন, ‘না। তবে এ কারণে দুর্বল হয়ে পড়লে তা মাকরুহ হবে। (বুখারি, হাদিস ১৯৪০)
৭.বীর্যপাত কিংবা সহবাসের আশংকা থাকাবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন করা।
৮. স্ত্রীর ঠোঁটে চুম্বন করা— বীর্যপাত বা সহবাসের আশঙ্কা থাকুক বা না থাকুক।
৯. বিবস্ত্র অবস্থায় স্ত্রীকে আলিঙ্গন করা।
১০. রোজা অবস্থায় মাথায় পানি ঢালা এবং ভেজা কাপড় শরীরে জড়িয়ে রাখা।
১১. বিনা ওজরে গ্লুকোজ জাতীয় ইনজেকশন (যা খাদ্যের চাহিদা মেটায়) নেওয়া মাকরুহ।
১২. এমন কাজ করা মাকরুহ যা দ্বারা রোজাদার নিতান্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। যার কারণে রোজার প্রতি বিরক্তিভাব আসে। যেমন— রোজা রেখে প্রচণ্ড ভারি কাজ করা অথবা রোজা রেখে শিঙ্গা লাগানো/ রোজা রেখে রক্তদান।
পরিশেষে বলা যায় যে, আমাদের এসকল কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। এবং আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকতে হবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url