শওয়ালে রোজা বা সাক্ষী রোজা কেন রাখতে হয় ও এর ফজিলত
শওয়ালে রোজা বা সাক্ষী রোজা কেন রাখতে হয় ও এর ফজিলত
৬ এ এপ্রিল শনিবার ২০২৪
রমজান মাস হলো আমাদের নেয়ামতের মাস। এ মাসে মহান আল্লাহ তায়ালা সকল সওয়াবকে ৭০ গুন বৃদ্ধি করে দেয়। এ মাস আমাদেরকে সংযম হতে সেখায়। এ মাস আমাদেরকে পাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে সেখায়।
সিয়াম সাধনের মাস রমজান ইসলামের মৌলিক বিধানগুলোর অন্যতম। জীবন ও জগতের সার্বিক কল্যাণ বিধানে সিয়ামের গুরুত্ব সীমাহীন। মানবজীবনে খোদা ভীতি, সহমর্মিতা, ধৈর্য ইত্যাদি গুণ একটি আদর্শ সমাজের জন্য অপরিহার্য।
কিন্তু মানুষ নিজের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে অন্যের অধিকারকে দলিত করার কারণে সামাজিক জীবনটা প্রায়শই উত্তপ্ত হয়ে উঠে। অশান্তির দাবানলে দগ্ধ হয় মানবতা।
নফল রোজাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা। সাধারণ মুসলমান এই ছয় রোজাকে সাক্ষী রোজা হিসেবে জানলেও পবিত্র কোরআন, হাদীস বা ধর্মীয় গ্রন্থাদিতে এই নামটি খুঁজে পাওয়া যায় না।
শাওয়াল মাসের ছয় রোজার ফজিলত:-
রমজান মাসের পরের মাস অর্থাৎ হিজরি সনের দশম মাস হলো শাওয়াল মাস। এ মাসের প্রথম দিনে মুসলিম উম্মার সর্ববৃহৎ জাতীয় উৎসব, ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়।
উৎসব আনন্দে মুসলমানগণ যাতে রমজানের মহৎ শিক্ষাটা ভুলে না যায়, হয় তো সে জন্যই রাসুলে করিম (সা.) এ মাসে ছয়টি নফল রোজা রাখতে উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন।
হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রা.) একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসের সব ফরজ রোজাগুলো রাখল অতঃপর শাওয়াল মাসে আরও ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারাবছর ধরেই রোজা রাখল। (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১১৬৪)
আলোচ্য হাদিসে যে বিষয়টি বিশেষভাবে লক্ষণীয়, তা হলো- শুধু শাওয়াল মাসে ছয়টি
রোজা রাখলেই এক বছরের নফল রোজার সওয়াব পাওয়া যাবে তেমনটি নয়। আবার শুধু মহিমাম্বিত রমজানে পুরো একমাস রোজা রাখলেও এক বছরের নফল রোজার সওয়াব দেওয়া হবে সে কথাও কোথাও বলা হয়নি। বরং পুরো রমজান মাস রোজা রাখার পরে শাওয়াল মাসে আরও ছয়টি রোজা রাখলে তবেই পূর্ণ এক বছর নফল রোজা রাখার সওয়াব লাভ করা যাবে সে কথাই হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন।
বস্তুত হাদিসে পবিত্র কোরআনেরই একটি আয়াতের বক্তব্য বিবৃত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে কেউ কোন নেক আমল করবে তাকে তার দশ গুণ সওয়াব প্রদান করা হবে। (সুরা আল-আনআম: ১৬০)
সুতরাং রমজানের এক মাসের ১০ গুণ হলো দশ মাস আর শাওয়াল মাসের ছয়দিনের দশগুণ হলো ৬০ দিন অর্থাৎ দুইমাস।
অর্থাৎ পূর্ণ এক বছরের নফল রোজার সওয়াব লাভের জন্য রমজানের রোজা রাখার পরে শাওয়াল মাসের ছয় রোজা রাখার শর্ত থাকলেও যদি কেউ কোনো কারণে রমজানের পূর্ণমাস রাখতে না পেরে থাকেন, তাহলে শাওয়াল মাসের ছয় রোজা রাখা যাবে না তেমনটি নয়। সে ক্ষেত্রে পূর্ণ এক বছরের নফল রোজার সওয়াব না পেলেও নফল রোজা পালনের সীমাহীন নেকি তিনি পাবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
হাদিসে বলা হয়েছে, রমজানের রোজা রাখার পর শাওয়ালের ৬টি রোজা রাখলে সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যাবে, সুবহানাল্লাহ। বান্দার উপর আল্লাহ কতই না পরম দয়ালু ও অশেষ মেহেরবান যে তিনি অল্প আমলের বিনিময়ে অধিক সওয়াব দিবেন। শাওয়াল মাসের ৬ রোজা পালন সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব প্রাপ্তির এমনি একটি পরম সুবর্ণ সুযোগ। যদিও ঈমানদার মুসলিম এর কাছে কোন ব্যখ্যার অবকাশ রাখে না। কারণ রাসুল সাঃ বলেছেন সেটাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। ধর্মীয় বিষয়ে নবী করীম (সা.) এর কাছে আল্লাহ যা ওহী দিয়েছেন শুধু তিনি তাই বলেছেন।
শাওয়ালের ৬ রোজায় বছরজুড়ে রোজা রাখার ফজিলত ওই ব্যক্তির জন্যই কার্যকর হবে, যে ব্যক্তি রমজান মাসজুড়ে ফরজ রোজা আদায় করেছেন এবং শাওয়ালের রোজা পালন করেন।
আবার যাদের রমজানের রোজার ভাংতি বা কাজা আছে, তাদের জন্য শাওয়ালের রোজা রাখা জরুরি নয়। সেক্ষেত্রে আগে রমজানের রোজার কাজা আদায় করে নেয়া জরুরি। তারপর সম্ভব হলে শাওয়ালের রোজা আদায় করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজান পরবর্তী এই সময়ে ৬ রোজা রাখার এবং রোজায় ধারাবাহিকতা রাখার তাওফিক দান করুন। নবিজীর সুন্নাত আমলের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
পরিশেষে বলা যায় যে আমাদের এ রোজা করতে হবে। এবং তা যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url