এশরাকের নামাজের নিয়ম ও ফজিলত
এশরাকের নামাজের নিয়ম ও এর ফজিলতসমূহ
৭ই এপ্রিল রবিবার ২০২৪
ছবি সংগ্রহীত
ইশরাক শব্দের অর্থ হলো আলোকিত হওয়া। সূর্য পরিপূর্ণভাবে উদিত হওয়ার পর ইশরাকের নামাজ আদায় করতে হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) ফজরের নামাজের পর থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত মসজিদে অবস্থান করতেন।
আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করল এবং সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর জিকিরে বসে থাকল; অতঃপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করল, সে একটি পরিপূর্ণ হজ ও ওমরাহর সওয়াব পাবে। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ৫৮৬)
নামাজ হলো আমাদের জন্য একটি নেয়ামত। কারন বান্দা এ নামাজের মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর সাথে কথা বলি, মহান আল্লাহর সন্নিকটে যাই। আমরা বলি যে সেজদা আমাদের জায়নামাজেপড়ে মাটিতে পরে,কিন্তু না সেজদা আমাদের মহান আল্লাহ তায়ালার পায়ে পরে।
আমাদের সাধারণত নামাজ আছ ৩ ধরনের যথাঃ- ফরজ, সুন্নত ও নফল। আমাদের ৫ ওয়াক্ত নামাজে যেমন নাম আছে, তেমনি অন্যান্য নামাজের তেমনি নাম আছে তার মধ্যে একটি হলো এশরাকের নামাজ। ইশরাকের নামাজ সাধারনত সকালে সূর্য ওঠা থেকে সকাল ১০ টা পর্যন্ত। তবে উত্তম হলো, বেলা ওঠার এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে ইশরাক পড়া ।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জামাআতের সঙ্গে ফজরের নামাজ পড়ল। অতপর সূর্য উঠা পর্যন্ত সেখানে বসে আল্লাহর জিকির করল; অতপর দাঁড়িয়ে দুই রাকাআত নামাজ পড়ল; সে একটি হজ ও ওমরাহ করার সাওয়াব নিয়ে ফিরে গেল। ’ (তাবারানি, আত-তারগিব)
- অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘সূর্য উঠার আগে আল্লাহর জিকির, তাকবির, তাহমিদ ও তাহলিল পাঠ করা আমার কাছে ইসমাঈল বংশের দুইজন গোলাম আজাদ করার চেয়েও অধিক প্রিয়। ’ (মুসনাদে আহামদ)
হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজর নামাজ জামাআতে আদায় করার পর সূর্য উঠার আগ পর্যন্ত ওখানে বসে বসেই আল্লাহর জিকির করে। তারপর দুই রাকাআত নামাজ আদায় করে। তার জন্য পূর্ণাঙ্গ হজ ও ওমরার সমান সাওয়াব রয়েছে।’ (তিরমিজি, মিশকাত)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জামাআতের সঙ্গে ফজরের নামাজ পড়ল। অতপর সূর্য উঠা পর্যন্ত সেখানে বসে আল্লাহর জিকির করল; অতপর দাঁড়িয়ে দুই রাকাআত নামাজ পড়ল; সে একটি হজ ও ওমরাহ করার সাওয়াব নিয়ে ফিরে গেল।’ (তাবারানি, আত-তারগিব)
ইশরাকের নামাজের সুনির্দিষ্ট রাকাআত সংখ্যারও উল্লেখ না থাকলেও কেউ কেউ দুই রাকাআত থেকে শুরু করে আট রাকাআত পর্যন্ত পড়ে থাকে। আবার কিছু সংখ্যক ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, ইশরাকের নামাজ দুই রাকাআত করে ১২ রাকাআত পর্যন্ত পড়া যায়।
তবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই দুই রাকাআত করে ৪ রাকাআত পড়তেন। এটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমল দ্বারা প্রমাণিত।
ইশরাকের নামাজ পড়ার ফজিলতঃ-
ইশরাকের নামাজ যেটি কোরআন এবং হাদিসে নফল নামাজ এর মধ্যে সব থেকে বেশিবার উল্লেখ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ এর কাছে প্রিয় হওয়ার অন্যতম মাধ্যম হলো এই নামাজ। চলুন এর কিছু ফজিলত জেনে নেওয়া যাকঃকেউ যদি ফজর এর সালাত আদায় করার পর কোনো কোনো কাজ না করে এবং সেখানে বসে থাকে সূর্যদয় হওয়ার আগ পর্যন্ত এবং সূর্য উদয় হওয়ার কিছু সময় পর ২ রাকাত নামাজ আদায় করে তাহলে তার আমল নামায় ১ টি হজ এবং উমরা পালন করার নেকি দেওয়া হয়।
ইশরাকের নামাজ আমাদের কে শারিরিক এবং মানসিক ভাবে সুস্থ রাখে। ইশরাক এর সালাত আমাদের পরবর্তি সালাত আদায় এর জন্য অনেক ভালো সহায়ক এবং সালাতের উপর নিজেকে অনড় রাখতে সাহায্য করে। অনেক গুরুত্তপুর্ণ হওয়ার কারণে এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ এর কাছে কিছু চাইলে তা তিনি কবুল করে নেন।
ইশরাক পড়ার আরেকটি লাভ হলো, এর সুবাদে সূর্যোদয়ের আগপর্যন্ত জিকির ও তিলাওয়াতে মশগুল থাকার সুযোগ পাওয়া যায়। মহানবী (সা.) বলেন, ‘সূর্য ওঠার আগপর্যন্ত আল্লাহর জিকির, তাকবির, তাহমিদ ও তাহলিল পাঠ করা আমার কাছে ইসমাইল (আ.)-এর বংশের দুটি দাস মুক্ত করার চেয়ে অধিক প্রিয়।’ (আহমদ)
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মানুষের শরীরে ৩৬০টি জোড়া আছে। অতএব, মানুষের কর্তব্য হলো প্রত্যেক জোড়ার জন্য একটি করে সদকা করা। সাহাবায়ে কেরাম বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! কার শক্তি আছে এই কাজ করার?’ তিনি বলেন, ‘মসজিদে কোথাও থুতু দেখলে তা ঢেকে দাও অথবা রাস্তায় কোনো ক্ষতিকারক কিছু দেখলে সরিয়ে দাও। তবে এমন কিছু না পেলে,চাশতের দুই রাকাত নামাজ এর জন্য যথেষ্ট।
পরিশেষে বলা যায় যে, আমাদেরকে এ নামাজ পরতে হবে। এবং ঘরে বসেই হজ্ব ওমরার অসংখ্য সওয়াব অর্জন করতে হবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url