সেহেরিতে ও ইফতারিতে খেজুর খেলে কি উপকার হয়
সেহেরি ও ইফতারিতে খেজুরের উপকারীতা
২৯ শে মার্চ ২০২৪ শুক্রবার
রমজান মাস হলো সকল উম্মাহর জন্য রহমতের মাস। এ মাসে মহান আল্লাহ তায়ালা জান্নাতের দরজা খুলে দেয়। এ মাস আমাদের সংযম হতে সেখায়। এ মাসে আমাদের খেজুরের ভূমিকা অনেক। খেজুর আমাদের এনার্জি যাগায়।
খেজুর খাওয়া সুন্নত। খেজুর খেলে আমাদের সুন্নতের পাশাপাশি শরীরে সুস্বাস্থ্যর উপকার হবে। রোজা রাখার পড় আমাদের শরীরে যে গ্লুকোজের ঘাটতি দেখা দেয় এই খেজুর সেই ঘাটতিতা পূরন করে। এর পাশাপাশি শরীরে ক্যালরি যোগাতে সাহায্য করে। আবার রোজা রাখার পর আমাদের শরীরে যে ক্লান্তি অনুভব হয়, সে ক্লান্তি খেজুর দূর করে।
ফ্যাটহীন উচ্চ ক্যালোরি সম্পন্ন খেজুরের বেশির ভাগ ক্যালরি আসে কার্বোহাইড্রেট থেকে।২৪ গ্রামের বড় মেডজুল খেজুরগুলোতে থাকে ৬৬.৫ ক্যালোরি। এছাড়াও খেজুর যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার সহ ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান সম্পন্ন।
ইউএসডিএ (ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার) অনুসারে, খেজুরে বিদ্যমান পুষ্টি উপাদানের মধ্যে সোডিয়ামের পরিমাণ ০.২ মিলি গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৬ গ্রাম, ফাইবার ০.৬ গ্রাম, শর্করা ৫ গ্রাম, প্রোটিন ০.২ গ্রাম, পটাসিয়াম ৫৩মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৩.৪ মিলিগ্রাম, এবং আয়রন ০.১ মিলিগ্রাম।
একটি খেজুরে ৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে, যার বেশিরভাগই আসে চিনি থেকে। খেজুরের মিষ্টি স্বাদের পেছনে রয়েছে এতে থাকা প্রচুর পরিমাণে ফ্রুক্টোজ, যা গ্লুকোজের চেয়েও দ্বিগুণ মিষ্টি। ফল পাকার সঙ্গে সঙ্গে চিনির পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং ফাইবার হ্রাস পায়।
খেজুরের গ্লাইসেমিক সূচক ৪৩ থেকে ৫৫ এর মধ্যে। আর এই পরিসরটি নির্ভর করে খেজুরে পরিপক্কতার ভিন্নতা এবং স্তরের ওপর। সাধারণত মিষ্টি ফলগুলো উচ্চ গ্লাইসেমিকের হয়। কিন্তু খেজুরের বেলায় তা ভিন্ন। এগুলো আশ্চর্যজনকভাবে বেশ কম গ্লাইসেমিক ফল।
খেজুর পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং আয়রনের বেশ ভালো একটি উৎস। খেজুর ফোলেট এবং প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড সহ ছয়টি প্রয়োজনীয় ভিটামিন-বি সরবরাহ করে। খেজুরে রয়েছেউচ্চমাত্রার পলিফেনল, যা এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি সেলুলার ক্ষতি থেকে দেহকে রক্ষা করে।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় খাবারের একটি ছিল এই খেজুর। তিনি নিজেও ইফতার করতেন এই খেজুর খেয়েই। খেজুর খেয়ে ইফতারের এই রীতির পেছনে রয়েছে কিছু বৈজ্ঞানিক কারণ।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর সময় থেকেই খেজুর দিয়ে ইফতারের চল। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিজে খেজুর ও পানি খেয়ে ইফতার করতেন। মিষ্টান্ন, ফল, বিশেষত খেজুর খেয়ে ইফতার করা সুন্নত; যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে যেকোনো হালাল খাবার খেয়ে, এমনকি শুধু পানি দিয়েও ইফতার করা যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ রোজা রাখলে খেজুর দিয়ে যেন ইফতার করে, খেজুর না হলে পানি দিয়ে; নিশ্চয়ই পানি পবিত্র।’ (সূত্র: তিরমিজি ও আবু দাউদ; আলফিয়্যাতুল হাদিস: ৫৬২, পৃষ্ঠা: ১৩১-১৩২)
সেহেরিতে আমরা যদি শুধু খেজুর খেয়ে রোজা রাখি তাহলে আমাদের ক্লান্তি অনুভব হবে না কারণ খেজুরে আছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ও ক্যালরি। আর ইফতারিতে খেজুর খেয়ে রোজা ভাঙ্গা সুন্নত। খেজুর খেয়ে রোজা ভাঙ্গলে সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয় এবং শরীরে এনার্জি যোগায়।
খেজুরে বিদ্যমান প্রাকৃতিক মিষ্টিতে প্রধানত গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ ও সুক্রোজ আছে, যা দ্রুত রক্তে চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে তাৎক্ষণিক শক্তি জোগায়। তাই সারা দিন রোজা রাখার পর খেজুর খেলে শরীর দ্রুত সতেজ ও সবল হয়ে ওঠে।খেজুরকে বলা হয় আঁশ, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিনের মতো অতি প্রয়োজনীয় কিছু পুষ্টি উপাদানের ‘পাওয়ার হাউস’। এসব পুষ্টি উপাদান শরীরের ক্ষয়পূরণ করে।
হাদিসে সাদ (রা.) বর্ণনা করেন— একবার আমি অসুস্থ হলে রাসুল (সা.) আমাকে দেখতে আসেন। এ সময় তিনি তার হাত আমার বুকের ওপর রাখেন। আমি তার শীতলতা আমার হৃদয়ে অনুভব করি। এরপর তিনি বলেন, তুমি হৃদরোগে আক্রান্ত। কাজেই তুমি সাকিফ গোত্রের অধিবাসী হারিসা ইবনে কালদার কাছে যাও। কেননা সে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক। আর সে যেন মদিনার আজওয়া খেজুরের সাতটা খেজুর নিয়ে বিচিসহ চূর্ণ করে তোমার জন্য তা দিয়ে সাতটি বড়ি তৈরি করে দেয়। (আবু দাউদ: ৩৮৩৫)
আলি (রা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সাতটি আজওয়া খেজুর প্রতিদিন আহার করে, তার পাকস্থলীর প্রতিটি রোগ নির্মূল হয়ে যায়।’ (কানজুল উম্মাল: ২৮৪৭২;)
আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী (স.) নামাজের আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর খেয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকত, তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেজুরও না থাকত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে।’ (তিরমিজি; রোজা অধ্যায়: ৬৩২)
সালমান ইবনে আমির (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন—‘তোমাদের কেউ রোজা রাখলে খেজুর দিয়ে যেন ইফতার করে, খেজুর না হলে পানি দিয়ে; নিশ্চয় পানি পবিত্র‘। (আহমদ, তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ ও দারেমি; আলফিয়্যাতুল হাদিস: ৫৬২, পৃষ্ঠা: ১৩১-১৩২)
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ঈমানদার ব্যক্তির জন্য খেজুর দিয়ে সেহরি খাওয়া কতোই না উত্তম! (আবু দাউদ: ২৩৪৫)
আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আজওয়া জান্নাতের, এতে বিষক্রিয়ার প্রতিষেধক রয়েছে...।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০৬৬)
পরিশেষে বলা যায় খেজুর আমাদের জীবনে খুবই উপকারী। খেজুর খেলে সুন্নতের পাশাপাশি শরীর সুস্বাস্থ্য হবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url