রমজান মাসে করনীয় ও বর্জনীয় কাজ গুলো কি চলুন জেনে নেয়া যাক
রমজান মাসে করনীয় ও বর্জনীয় কাজ গুলো কি চলুন জেনে নেয়া যাক
৪ই মার্চ সোমবার ২০২৪
মুসলিম বিশ্বের জন্য রমজান মাস কে রহমতের মাস বলা হয়। এই মাসে জান্নাতের সকল দরজা আল্লাহ খুলে দেন এবং জাহান্নামের সকল দরজা সমূহ বন্ধ করে দেন। আল্লাহ তার বান্দাদের উপর রহমত বর্ষণ করতে থাকেন। রমজান মাস সব থেকে ফজিলত পূর্ণ ও বরকতময় মাস। এ মাসে পবিত্র কোরআন নাজরুল হয়েছে। পবিত্র রমজান মাসে এমন অনেক কাজ রয়েছে যা আমাদের করণীয় এবং এমন অনেক কাজ রয়েছে যা আল্লাহ আমাদের বর্জন করতে বলেছেন। চলুন তবে রমজান মাসে করণীয় ও বর্জনীয় কাজগুলো কি তা জেনে নেয়া যাক -
গোনাহ বর্জন
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেন "অনেকে রোজার দ্বারা ক্ষুধার্ত এবং তৃষনার্ত ছাড়া অন্য কিছুই লাভ করেনা। অন্য এক হাদিস শরীফে বলেন "যে গর্হিত কথাবর্তা এবং পাপ কাজ পরিত্যাগ করতে পারেনা, আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার তার খাবার এবং পানীয় ত্যাগ করায় কোনো প্রয়োজন নেই। অর্থ্যাৎ তার রোজা গ্রহণীয় নয়।
সহীহ আল বুখারী (ভলি:৩, হাদিস:১২৭) সবরকম গোনাহ থেকে বেচে থাকতে হবে। এর মধ্যে আর একটি ভয়াবহ গোনাহ হোলো গীবত। গীবতে একটি ঘটনা নীচে বলা হোলো: গীবত থেকে বেচে থাকা: রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর যুগে দুই মহিলা রোজা রাখল। রোযায় তাদের এত কষ্ট হোলো যে, তারা মৃত্যুর মুখোমুখী হোলো। রসুলুল্লাহ এর খেদমতে বিষয়টি জানানো হলে তিনি তাদের কুলি করতে বললেন। তারা কুলি করলে তাদের মুখ থেকে ছোটো গোস্তের টুকরা বের হোলো। তারা আশ্চর্য হয়ে বলল, আমরা তো কোনো পানাহারই করিনি।
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বললেন, মুলত তোমরা রোজা রেখে অন্যের গীবত করেছ। আর গীবত হোলো মৃত ভাইয়ের গোস্ত খাওয়া। বর্তমানে আমাদের এমন অব্হা যে, চুপ থাকলে সওয়াব হয়, আর কথা বললে গীবত করি। অনেকে তো এটাকে গোনাহ মনে করি না। সাধারন মুসলমান থেকে শুরু করে আলেমগণ পর্যন্ত এই গোনাহে লিপ্ত। গীবতে আর একটি ভয়াবহ দিক হোলো, আপনি যার গীবত করছেন, তার গোনাহ গুলো আপনার আমলনামায় চলে আসবে আর আপনার নেকীগুলো তার আমলনামায় চলে যাবে।
গুনাহ থেকে দূরে থাকা
আসুন এই রোজায় সমস্ত গোনাহ থেকে তওবা করে ফেলি। মনে করি এটাই আমাদের শেষ রোজা। যারা মোবাইলে গান শোনেন তারা অন্তত এই মাসটা গান বন্ধ রাখুন, এর পরিবর্তে কোরআন তেলাওয়াত, হামদ, কাসিদা শুনুন ।যাদের বাজারে দোকান আছে, অন্তত এই মাসের সম্মানে টেলিভিশন বন্ধ রাখুন, গান বন্ধ রাখুন।
হয়ত এর ওসীলায় আল্লাহ তাআলা আপনাকে, আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। গোনাহ সব সময় বড় ভাবুন, কোনো গোনাহ-ই ছোটা না। আশরাফ আলী থানভী (রহ:) বলেন, কেউ কি কখনও বলে এটা ছোট আগুন ওটা বড় আগুন। ছোট হোক, বড় হোক পুড়িয়ে ধংস করার জন্য এক শলতে আগুনই যথেষ্ট। তেমনি গোনাহ ছোট হোক বা বড় হোক সব ক্ষতিকর। একবার এক বুজুর্গ ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে যাবার সময় দেখলেন এক ব্যক্তি বসে বসে কাদছেন।
আর এই কারণ জিজ্ঞেস করলে সেই ব্যক্তি বললেন অনেক আগে এই জায়গায় আমি একটি গোনাহ করেছিলাম, সেই কথা মনে করে কাঁদছি। সুবহানাল্লাহ। একেই বলে প্রকৃত খোদাভীতি। আরা আমাদের অবস্হা এমন, গোনাহ করে গর্ব করে বেড়াই। একটি জিনিস মনে রাখবেন, খাবার থেকে বিরত রাখা নিজেকে সহজ, কিন্তু গোনাহ থেকে নিজেকে বিরত রাখা খুবই কঠিন। আর যদিও গোনাহ থেকে নিজেকে বিরত রাখা সহজ হয়, অন্তরকে আল্লাহ ছাড়া সমস্ত কিছু থেকে বিরত রাখা আরো কঠিন।
নেকী অর্জন
সারা বছর আমরা আমাদের জন্য ব্যয় করছি, একটি মাস না হয় আল্লাহর জন্য ব্যয় করলাম । মহিলারা জিকির করতে করতে সেহরী, ইফতার তথা সবসময় খাবার রান্না করতে পারেন পুরুষরা জিকির করতে করতে ফসল কাটবেন অফিসে চাকরী করতে পারেন। এতে আমাদের কাজও সমাধা হবে, সাথে সওয়াবও পেতে থাকব। কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বললে, সম্পূর্ণ কাজটি তাহলে সওয়াবের মধে গন্য হবে।
বেশি করে আমল করা
আল্লাহতায়ালা বলেছেন তোমার রমজান মাসে সিয়াম পালন কর ও বেশি বেশি আমল করো। ইমাম আবু হানিফা (রহ:) রোজার মাসে দিনে এক খতম, রাতে তাহাজ্জুদে ১ খতম এবং তারাবীতে ৩ খতম অর্থ্যাৎ রোজার মাসে আনুমানিক ৬৩ বার কোরআন খতম দিতেন। হযরত আলী কুরাইশি (রহ:) মাঠে কাজ করতে যেতেন আর মুখে মুখে জিকির করতেন। এভাবে প্রতিদিন উনি ৭০ হাজার বার আল্লাহর জিকির করতেন ।জান্নাতে মুমিনদের একমাত্র আফসোস থাকবে একটি বিষয় নিয়ে, দুনিয়াতে জিকির ছাড়া যে সময় অতিবাহিত করেছে শুধুমাত্র সেই সময়টা নিয়ে। আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিকভাবে বেশি করে আমল করার তৌফিক দান করুন।
হাদিস শরীফে এসেছে, রসুলুল্লাহ দোয়া করতেন "হে আল্লাহ, রজব ও শাবান মাসে আমাদের জন্য বরকত দান করুন এবং আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌছিয়ে দিন"। এ মাসটি কত বরকতময় যে তা পাবার জন্য আল্লাহর রসুল পর্যন্ত দোয়া করতেন। সুবহানা্ল্লাহ আল্লাহ-তাআলা ক্বোরআন কারীমায় বলেন –
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার।
(সুরাহ বাকারাহ: ১৮৩)
সুতরাং রমজান মাসে নিজেকে সংযত রেখে শুধুমাত্র আল্লার ইবাদত বন্দেগি এবং সিয়াম পালনের মাধ্যমে এবং তওবা করে নিতে হবে। কেননা আল্লাহ যদি আমাদের মাফ না করেন তবে আমরা কখনোই জান্নাত লাভ করতে পারবো না বরং জাহান্নামি হয়ে পড়বো।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url