মা-বাবার প্রতি ছেলেমেয়েদের হক
মা-বাবার প্রতি ছেলেমেয়েদের হক
১১ই মার্চ সোমবার ২০২৪
মহান আল্লাহ তায়ালা মা- বাবাকে আমাদের জন্য অনেক বড় নেয়ামত হিসেবে আমাদের মাঝে প্রেরন করেছেন। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ ( স. ) বলেছেন মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। আর আরেক হাদিসে আছে বাবা হলো জান্নাতের উত্তম রাস্তা।
মহান আল্লাহ তায়ালা পিতা মাতার হক সম্পর্কে কুরআনে কারিমে কয়েকটি কথা ছেলেমেয়েদেরকে নসিয়ত করেছেন,সেগুলো নিচে বর্ণনা করা হলোঃ-
১.পিতা ও মাতার সঙ্গে সবচেয়ে উত্তম ভাষায় কথা বলবে।
২. পিতা ও মাতার সঙ্গে উহ শব্দটি ও ব্যাবহার করবে না।
৩. পিতা ও মাতাকে ধমক দিও না।
৪. পিতা ও মাতার সঙ্গে শিষ্টাচারপূর্ণ কথা বলবে।
৫. পিতা ও মাতার জন্য রহমতের দোয়া করবে।এবং প্রতি মোনাজাতের সময় পরবে,[রব্বানা আতিনা ফিদদুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াকিনা আজাবান্নার। (সূরা বনি ইসরাইল) ]
আরবির বাংলা মানেঃ-
[হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম করো, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন। (সূরা বনি ইসরাইল)।]
হজরত আবদুল্লাহ রা: বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে আমি প্রশ্ন করলাম, সবচেয়ে উত্তম আমল কী? রাসূল সা: বলেন, যথাসময়ে নামাজ আদায় করা। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কী? রাসূল সা: বললেন, মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করা। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম অতঃপর কী? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা (সহিহ বুখারি- ৫৯৮০)।
وَ اعۡبُدُوا اللّٰهَ وَ لَا تُشۡرِکُوۡا بِهٖ شَیۡئًا وَّ بِالۡوَالِدَیۡنِ اِحۡسَانًا
‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তাঁর সঙ্গে কোনো কিছু শরিক করো না এবং বাবা-মার মঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।’ (সুরা আন-নিসা : আয়াত ৩৬)
এ আয়াতে কারিমায় মহান আল্লাহ মানুষকে তাঁর ইবাদত করার নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করতেও নিষেধ করেছেন। পাশাপাশি বাবার প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালনে উত্তম আচরণ করারও নির্দেশ দিয়েছেন।
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সে ব্যক্তির নাক ধূলায় মলিন হোক, সে ব্যক্তির নাক ধূলায় মলিন হোক, সে ব্যক্তির নাক ধূলায় মলিন হোক; যে ব্যক্তি তার বাবা-মাকে উভয়কে কিংবা একজনকে বার্ধক্য অবস্থায় জীবিত পেলো; অথচ সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারলো না।’ (মুসলিম)
আমাদের মনে রাখতে হবেঃ-
বাবা-মার সঙ্গে ইহসান তথা ন্যায়-সঙ্গত আচরণ ও আনুগত্য করা জরুরি। আর এর মাধ্যমেই জান্নাতের নিশ্চয়তা পাবে মুমিন। কেননা সন্তানের প্রধান দায়িত্বই হলো- বাবা-মার আনুগত্য করা; তাদের প্রতি ইহসান করার মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে মুক্তির প্রচেষ্টা করা। কারণ বাবা-মার প্রতি অবাধ্যতাই হবে জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
তাই বাবা-মা জীবিত থাকলে তাদের খেদমত করবে। তাদের প্রতি দয়া দেখাবে। তাদের খোঁজ-খবর নেবে। জীবিত কিংবা মৃত সব বাবা-মার জন্য সন্তান সব সময় এভাবে দোয়া করবে-
১. رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
উচ্চারণ : ‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।’
অর্থ : (হে আমাদের) পালনকর্তা! তাদের উভয়ের প্রতি দয়া কর; যেভাবে তারা আমাকে শৈশবে লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৪)
২. رَبَّنَا ٱغْفِرْ لِى وَلِوَٰلِدَىَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ ٱلْحِسَابُ
উচ্চারণ : ‘রাব্বানাগফিরলি ওয়ালিওয়ালিদাইয়্যা ওয়া লিলমুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।’
অর্থ : ‘হে আমাদের রব! যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন আপনি আমাকে, আমার বাবা-মাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দেবেন।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪১)
৩. رَّبِّ ٱغْفِرْ لِى وَلِوَٰلِدَىَّ وَلِمَن دَخَلَ بَيْتِىَ مُؤْمِنًا وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَٱلْمُؤْمِنَٰتِ وَلَا تَزِدِ ٱلظَّٰلِمِينَ إِلَّا تَبَارًۢا
উচ্চারণ : ‘রাব্বিগফিরলি ওয়ালিওয়ালিদাইয়্যা ওয়া লিমান দাখালা বাইতিয়া মুমিনাও ওয়া লিলমুমিনিনা ওয়াল মুমিনাত ওয়া লা তাযিদিজ জ্বালিমিনা ইল্লা তাবারা।’
অর্থ : ‘হে আমার রব! আমাকে, আমার বাবা-মাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করুন আর আপনিজালিমদের ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই বাড়িয়ে দেবেন না।’ (সুরা নুহ : আয়াত ২৮)
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
مَنْ أَحَبَّ أَنْ يَصِلَ أَبَاهُ فِي قَبْرِهِ،فَلْيَصِلْ إِخْوَانَ أَبِيهِ بَعْدَهُ
‘যে ব্যক্তি তার বাবার সঙ্গে কবরে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে ভালোবাসে, সে যেন বাবার মৃত্যুর পর তার ভাইদের সাথে সুসম্পর্ক রাখে।’ (ইবন হিববান)
পরিশেষে বলা যায়, আমাদের পিতা ও মাতার সঙ্গে শিষ্টাচার ভাষায় নম্র ভদ্র ভাবে কথা বলতে হবে,এবং সবচেয়ে উত্তম ভাষায় কথা বলতে হবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url