ইহকাল ও পরকাল সম্পর্কে বর্ণণা
ইহকাল ও পরকাল সম্পর্কে বর্ণণা
১০ ই মার্চ ২০২৪ রবিবার
আমাদের জীবনে পরকালের যেমন গুরুত্ব রয়েছে , তার চেয়ে বেশি আমাদের পরকালের গুরুত্ব রয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন দুনিয়া হলো তোমাদের আখেরাতের শস্য ক্ষেত্র। তোমরা দুনিয়াতে যেমন কর্ম করবা, আখিরাতে তেমন ভোগ করবা।
ইসলামি শরিয়তে ইহকাল হলো দুনিয়ার পার্থিব জীবন। আর পরকাল হলো মৃত্যুর পরবর্তী জীবন।আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ইহকালে আমিই তোমাদের বন্ধু, এবং পরকালেও। সেখানে তোমাদের জন্য থাকবে, যা তোমাদের মন চাইবে। তোমাদের সব দাবি বাস্তবায়নের ব্যবস্থা থাকবে।’ (সুরা ফুসসিলাত, আয়াত : ৩১-৩২)
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘জান্নাতিদের মধ্যে এক ঘোষক ঘোষণা করবেন, এখানে তোমরা চিরসুস্থ, কখনো অসুস্থ হবে না। তোমরা এখানে নিশ্চিত চিরঞ্জীব, কখনো মৃত্যুমুখে পতিত হবে না। এখানে তোমরা চিরতরুণ, কখনো বৃদ্ধ হবে না। সর্বদা নিয়ামতে ভরপুর থাকবে, কখনো বঞ্চিত হবে না।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৮২৭)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সফল সেই ব্যক্তি, যে ইসলাম গ্রহণ করেছে, পর্যাপ্ত জীবিকাপ্রাপ্ত হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে (পার্থিব জীবনে) যা দান করেছেন তাতে সন্তুষ্ট করেছেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১০৫৪)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘সুসংবাদ সে ব্যক্তির জন্য ইসলামের জন্য সুপথপ্রাপ্ত হয়েছে, তার ছিল পর্যাপ্ত জীবিকা এবং সে তাতে সন্তুষ্ট ছিল।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৩৪৯)
আল্লাহর আনুগত্যে জীবনের নিরাপত্তা ঃ- আল্লাহর নিরাপত্তার মধ্যেই রয়েছে মানবজীবনের শান্তি ও নিরাপত্তা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা সাড়া দাও আল্লাহ ও রাসুলের জন্য যখন তারা তোমাদের আহ্বান করেন যেন আল্লাহ তোমাদের জীবন দান করেন।’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ২৪)
ইহকাল ও পরকালঃ-ইসলাম ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি করলেও পরকালের অনন্ত জীবনকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে আল্লাহ, পরকালীন জীবনই প্রকৃত জীবন। সুতরাং আপনি আনসার ও মুহাজিরদের কল্যাণ করুন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪১৩)। আল্লাহ সবাইকে উভয় জগতে নিরাপত্তা ও সাফল্যমণ্ডিত করুন। (আমিন।)
পবিত্র৷ আল কোরআনে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু। আর তোমরা কেয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলাপ্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে দোজখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, তার কার্যসিদ্ধি ঘটবে। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কোনো সম্পদ নয়।’ (সূরা আল ইমরান : ১৮৫)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আমার কাঁধে হাত রেখে বলেন, ‘তুমি দুনিয়ায় এমনভাবে থাকো যেন তুমি একজন প্রবাসী অথবা পথচারী। আর তুমি নিজেকে একজন কবরবাসী বলে গণ্য করবে।’
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বেশিবেশি পরকালের চিন্তাভাবনা করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার বরকত ও কল্যাণ দান করুন। (আমিন)
হজরত আবান ইবনে উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, হজরত যায়েদ ইবনে সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু দুপুরের সময় মারওয়ানের কাছ থেকে বের হয়ে এলে আমি ভাবলাম, নিশ্চয়ই কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানার জন্য এ সময় তিনি তাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আমাদের শোনা কিছু হাদিস শোনার জন্য মারওয়ান আমাদের ডেকেছেন। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি-
مَنْ كَانَتِ الدُّنْيَا هَمَّهُ فَرَّقَ اللَّهُ عَلَيْهِ أَمْرَهُ وَجَعَلَ فَقْرَهُ بَيْنَ عَيْنَيْهِ وَلَمْ يَأْتِهِ مِنَ الدُّنْيَا إِلاَّ مَا كُتِبَ لَهُ وَمَنْ كَانَتِ الآخِرَةُ نِيَّتَهُ جَمَعَ اللَّهُ لَهُ أَمْرَهُ وَجَعَلَ غِنَاهُ فِي قَلْبِهِ وَأَتَتْهُ الدُّنْيَا وَهِيَ رَاغِمَةٌ
‘পার্থিব/দুনিয়ার চিন্তা যাকে মোহগ্রস্ত করবে, আল্লাহ তার কাজকর্মে অস্থিরতা সৃষ্টি করবেন, দরিদ্রতা তার নিত্যসংগী হবে এবং পার্থিব স্বার্থ ততটুকুই লাভ করতে পারবে, যতটুকু তার তাকদীরে লিপিবদ্ধ আছে। আর যার উদ্দেশ্য হবে আখেরাত বা পরকাল; আল্লাহ তার সবকিছু সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে দেবেন, তার অন্তরকে ঐশ্বর্যমন্ডিত করবেন এবং দুনিয়া স্বয়ং তার সামনে এসে হাজির হবে।’ (ইবনে মাজাহ ৪১০৫)
হজরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ-
مَنْ كَانَتِ الآخِرَةُ هَمَّهُ جَعَلَ اللَّهُ غِنَاهُ فِي قَلْبِهِ وَجَمَعَ لَهُ شَمْلَهُ وَأَتَتْهُ الدُّنْيَا وَهِيَ رَاغِمَةٌ وَمَنْ كَانَتِ الدُّنْيَا هَمَّهُ جَعَلَ اللَّهُ فَقْرَهُ بَيْنَ عَيْنَيْهِ وَفَرَّقَ عَلَيْهِ شَمْلَهَ وَلَمْ يَأْتِهِ مِنَ الدُّنْيَا إِلاَّ مَا قُدِّرَ لَهُ
‘যে ব্যক্তির একমাত্র চিন্তার বিষয় হবে পরকাল, আল্লাহ তাআলা সেই ব্যক্তির অন্তরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন এবং তার যাবতীয় বিচ্ছিন্ন কাজ একত্রিত করে সুসংযত করে দেবেন, তখন তার কাছে দুনিয়াটা নগণ্য হয়ে দেখা দেবে। আর যে ব্যক্তির একমাত্র চিন্তার বিষয় হবে দুনিয়া, আল্লাহ তাআলা সেই ব্যক্তির গরীবি ও অভাব-অনটন দুচোখের সামনে লাগিয়ে রাখবেন এবং তার কাজগুলো এলোমেলো ও ছিন্নভিন্ন করে দেবেন। তার জন্য যা নির্দিষ্ট রয়েছে, দুনিয়াতে সে এর চাইতে বেশি কিছু পাবে না।’ (তিরমিজি ঃ২৪৬৫)
আখেরাতের চিন্তাই উত্তম এবং সঠিক। পরকালের চিন্তা-ভাবনা মানুষকে দুনিয়ার যাবতীয় চিন্তা ও পেরেশানি থেকে মুক্ত রাখবে ইনশাআল্লাহ।
সুতরাং মানুষের উচিত, আখেরাত বা পরকালের চিন্তা বেশি বেশি করা। পরকালের চিন্তায় মানুষ দুনিয়ার অস্থিরতা, দারিদ্রতা ও পেরেশানি থেকে মুক্ত থাকা যায়। এ কারণেই মহান রাব্বুল আলামিন মানুষকে সতর্ক হওয়ার জন্য ঘোষণা করেছেন-
بَلۡ تُؤۡثِرُوۡنَ الۡحَیٰوۃَ الدُّنۡیَا
‘কিন্তু তোমরা দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দাও।
وَ الۡاٰخِرَۃُ خَیۡرٌ وَّ اَبۡقٰی
‘অথচ আখিরাতই উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী।’
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বেশিবেশি পরকালের চিন্তাভাবনা করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার বরকত ও কল্যাণ দান কর
সর্বশেষে বলা যায় আমাদের উপরের সবকিছু মেনে নেওয়া উচিত।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url