আত্মহত্যা একটি প্রতিরোধযোগ্য সমস্যা,এটি প্রতিরোধে করণীয় উপায়
১৩ই অক্টোবর শুক্রবার ২০২৩
ছবি সংগৃহীত
আত্মহত্যা আমাদের সমাজে খুব সাধারণ একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানসিক অসুস্থতা, বিশেষ করে বিষণ্নতা, ব্যক্তিত্ব ও আবেগের সমস্যা, মাদকাসক্তি আর সিজোফ্রেনিয়ায় যাঁরা ভুগছেন; তাঁদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি।
পৃথিবীতে বছরে আট লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে থাকেন। প্রতি ৪০ সেকেন্ডে ১ জন! বাংলাদেশে বছরে গড়ে ১০ হাজার জন আত্মহত্যা করেন। পাশ্চাত্যে মধ্য বা শেষ বয়সী মানুষেরা একাকিত্বে ভোগেন, যার কারণে সেখানে ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সী একাকী পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। বাংলাদেশে তরুণীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
বাংলাদেশে যৌতুক ও পারিবারিক নির্যাতন, আবেগ নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতা, দাম্পত্য কলহ, উত্ত্যক্তকরণ, প্রেম ও পরীক্ষায় ব্যর্থতা, দারিদ্র্য ও বেকারত্ব, আত্মহত্যার উপকরণের সহজপ্রাপ্যতা, মানসিক অসুস্থতা ইত্যাদি কারণে বেশির ভাগ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে থাকে। প্রচারমাধ্যমে আত্মহত্যার সংবাদের অতিপ্রচার, অপপ্রচার বা অদায়িত্বশীল সংবাদ পরিবেশনের কারণেও কখনো কখনো আত্মহত্যার ঘটনা বাড়তে পারে।
দুই ধরনের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। এক. আগে থেকে পরিকল্পনা করে, আয়োজন করে, সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যা করেন অনেকে। যেটাকে বলা হয় ডিসিসিভ সুইসাইড। দুই. হুট করে আবেগের রাশ টানতে না পেরে আত্মহত্যা করে ফেলেন অনেকে, যেটাকে বলা হয় ইমপালসিভ সুইসাইড। ডিসিসিভ সুইসাইড যাঁরা করেন, তাঁরা আগে থেকেই কিন্তু আত্মহত্যার ইঙ্গিত দিয়ে থাকেন। এ ধরনের মানুষ আত্মহননের আগে যেভাবে সেটা প্রকাশ করেন, তার মধ্যে আছে—
তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মৃত্যু আর আত্মহত্যা নিয়ে নিজের ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেন।
আত্মহত্যা বা মৃত্যুবিষয়ক কবিতা–গান লিখতে, শুনতে বা পড়তে থাকেন।
নিজের ক্ষতি করেন। প্রায়ই এঁরা নিজের হাত-পা কাটেন, বেশি বেশি ঘুমের ওষুধ খান।
মনমরা হয়ে থাকা, সব কাজে উৎসাহ হারিয়ে ফেলা, নিজেকে দোষী ভাবা—এগুলো বিষণ্নতার লক্ষণ; যা থেকে আত্মহত্যা ঘটে।
মাদকাসক্তি বা ইন্টারনেটে মাত্রারিক্ত আসক্তি আত্মহত্যায় সহায়তা করে।
সারা রাত জেগে থাকা আর সারা দিন ঘুমানো।
নিজেকে গুটিয়ে রাখা, সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়া।
পড়ালেখা, খেলাধুলা, শখের বিষয় থেকে নিজে দূরে থাকা।
আত্মহত্যা প্রতিরোধে করণীয়
আত্মহত্যা প্রতিরোধ করতে হলে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। শিশুদের বিকাশের সময় তাদের এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা সফলতার মতো ব্যর্থতাকে মেনে নিতে পারে। আত্মহত্যার উপকরণ, যেমন ঘুমের ওষুধ, কীটনাশকের সহজলভ্যতা কমাতে হবে। প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঘুমের ওষুধ বিক্রি বন্ধ করতে হবে। যেকোনো ধরনের মানসিক সমস্যা বা আত্মহত্যার ইঙ্গিত পেলে দ্রুত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।
আত্মহত্যা একটি প্রতিরোধযোগ্য বিষয়। সঠিক সময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারলে অবশ্যই আত্মহত্যা ঠেকানো যায়। এ জন্য সবাইকে যার যার ক্ষেত্র থেকে একযোগে কাজ করে যেতে হবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url