লেবুর উপকারিতা
লেবুর উপকারিতা
তীব্র গরমে শরীরের ক্লান্তি দূর করতে এক গ্লাস লেবুর শরবত হলে প্রাণটা জুরিয়ে যায়। লেবু আমাদের অনেকেরই প্রিয়। কিন্তু জানেন কী লেবুর গুণাগুণ! লেবু শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ত্বক পরিষ্কারক রাখে এছাড়াও কিডনি পাথর রুখতে, ওজন কমাতে দারুণ উপকারি লেবু। বিশেষ করে গ্রীষ্মে লেবু ম্যাজিকের মতো কাজ করে।
লেবুর পুষ্টিগুণ
ভিটামিন সি-এর উৎস হিসেবে পাতিলেবুর উপকারিতার কথা কারও অজানা নয়। কিন্তু তা ছাড়াও এর অন্যান্য কার্যকারিতাও রয়েছে, যে কারণে রোজকার খাবারের পাতে একটা করে লেবু রাখা আবশ্যিক। প্রায় পুরোটাই গুণসমৃদ্ধ হলেও কিছু ক্ষেত্রে লেবু খাওয়ার মাত্রা খানিক নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও ফাইবার এবং এন্টিব্যাকটেরিয়া ও এন্টিভাইরাল উপাদান। ফলে মৌসুমি নানা সংক্রামক রোগে, যেমন ঠান্ডা, কাশি, সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জার বিরুদ্ধে লড়তে পারে লেবু দারুণ কার্যকরী।
লেবু কেন খাওয়া দরকার
১) ভাইরাসজনিত সংক্রমণ প্রতিরোধঃ ভাইরাসজনিত সংক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে লেবুর রস। তাই নিয়মিত ভাতের সঙ্গে লেবু খেতে পারেন। এত করে কাওয়ার রুচি বাড়বে।
২) ক্ষত সারাতেঃ লেবুর মধ্যে থাকা ভিটামিন সি ক্ষতস্থান দ্রুত সারাতে সাহায্য করে। হাড়, তরুনাস্থি ও টিস্যুর স্বাস্থ্য ভাল রাখে।
৩) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেঃ লেবুর মধ্যে থাকা প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি সর্দি-কাশির সমস্যা দূর করে। স্নায়ু ও মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ায়। ফুসফুস পরিষ্কার করে হাঁপানি সমস্যার উপশম করে।
৪) হজমে সাহায্য করেঃ লেবুর রস শরীর থেকে টক্সিন দূর করে। বদহজম, বুক জ্বালার সমস্যাও সমাধান করে লেবু পানি। সেইসঙ্গে পরিপাক নালী থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয়। এটি কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর করে।
৫) ত্বক পরিষ্কার রাখতে লেবুঃ লেবুতে ভিটামিন সি এবং সাইট্রিক এসিড রয়েছে। এই রস শুধু ত্বকের তেলতেলে ভাবই দূর করে না, সেই সঙ্গে ত্বককে উজ্জ্বল করে দেয়। তাছাড়া লেবুর রস বয়সের বলিরেখা দূর করতে দারুণ কার্যকর।
৬) ওজন কমাতেঃ লেবুতে থাকা পেকটিন ফাইবার খিদে কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা খালি পেটে লেবুর রস খান, তাদের ওজন দ্রুত হ্রাস পায়। সুতরাং ওজন বৃদ্ধি নিয়ে চিন্তা না করে প্রতিদিন সকালে লেবুর রস খান।
৭) কিডনি পাথর সারাতেঃ লেবুতে উপস্থিত সাইট্রিক অ্যাসিড কিডনিতে ‘ক্যালসিয়াম অক্সালেট’ নামক পাথর গঠনে বাধা দেয়। সাধারণ কিডনি পাথরগুলোর মধ্যে এটি একটি।
৮) লিভার পরিষ্কার রাখতেঃ লেবুতে বিদ্যমান সাইট্রিক অ্যাসিড কোলন, পিত্তথলি ও লিভার থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করতে সাহায্য করে।
৯) মূত্রনালীর সংক্রমণ দূর করেঃ যদি মূত্রনালীতে সংক্রমণ ঘটে। তাহলে প্রচুর পরিমাণে লেবুর রস পান করুন। এটি আরোগ্য লাভে সাহায্য করবে।
১০) ক্যানসার প্রতিরোধঃ লেবু অনেক ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। বিশেষ করে স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে এর জুড়ি মেলা ভার।
এছাড়াও প্রতিদিন পাতে একটু লেবু খুব প্রয়োজন। কারণঃ
১) চুল, ত্বক ভাল রাখা তো বটেই, পাতিলেবুর গুণাগুণ ধমনীকে ভাল রাখতে ও এর কার্যকারিতা ঠিক রাখতে সহায়তা করে। ফলে পরোক্ষে হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা ও রক্ত চলাচলেও এর সদর্থক প্রভাব পড়ে।
২) শরীরে প্রবিষ্ট অনেক ক্ষতিকর ব্যাকটিরিয়াকে ধ্বংস করতে পারে লেবুতে থাকা ভিটামিন সি। ফুড পয়জ়নিং কিংবা ডায়েরিয়া প্রতিরোধে তাই পাতিলেবুর রস কাজে দেয়। এতে উপস্থিত সাইট্রিক অ্যাসিড হজমশক্তিও বাড়ায়। পেট খারাপ হলে লেবু খেতে নেই, এটি ভ্রান্ত ধারণা।
৩) লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত হওয়ায় পাতিলেবুর রস ডায়াবেটিক রোগীদের পক্ষে উপকারী। উচ্চ রক্তচাপযুক্ত রোগীদের ক্ষেত্রে লেবুতে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম ভাল কাজে দেয়। তা হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাও কমায়।
৪) ভিটামিন সি জলে দ্রাব্য ভিটামিন, তাই জলে লেবু রস গুলে খেতে পারেন। আবার ভাতের পাতেও খেতে পারেন তা। কোনও দিন বাড়িতে ফল কেনা না থাকলে, মিড মর্নিং স্ন্যাকের সঙ্গে লেবুর রস খেয়ে নিতে পারেন। আবার ছানা তৈরির সময়েও পাতিলেবুর রস ব্যবহার করাই ভাল। তবে দুধ আর লেবু পরপর খাবেন না কখনওই।
অনেকেই ভাত খাওয়ার সময়ে প্রায় সব পদের সঙ্গে লেবু চিপে নিয়ে খান। তাতে ক্ষতি নেই। তবে গরম জলে লেবু মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যেস থাকে অনেকের, যা ঠিক নয়। কারণ, গরম জলের উচ্চ তাপমাত্রায় ভিটামিন সি-এর কার্যকারিতাই নষ্ট হয়ে যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে লেবু খাওয়াও উচিত নয়, এতে অ্যাসিড হতে পারে। একই কারণে ত্বকে সরাসরি লেবু মেখে নেওয়ার প্রবণতা সম্পর্কেও সচেতন হওয়া দরকার। লেবুর রস ত্বকে সরাসরি মাখার পরে সেখানে রোদ পড়লে তা ত্বককে পুড়িয়ে কালো করে দিতে পারে, র্যাশও বেরোতে পারে। একে ‘ফাইটোফোটোডার্মাটিস’ বলা হয়। শুধু লেবুই নয়, অ্যালো ভেরা সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করতেও বারণ করা হয় একই কারণে।
অতিরিক্ত লেবু নয়ঃ
অতিমারির পর থেকে অনেক বাড়িতেই লেবু খাওয়ার চল বেড়েছে আগের চেয়ে। কেউ খাবারের সঙ্গে, কেউ চায়ে দিয়ে খাচ্ছেন লেবু। রোজ একটা করে লেবু খেলে তার উপকার যেমন অনেক, তেমনই লেবুর অতিরিক্ত ব্যবহার কিছু ক্ষেত্রে এড়িয়ে চলা ভাল। যেমন, কিডনির অসুখ থাকলে শরীরে পটাসিয়াম লেভেল হাই হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
লেবুতে পটাসিয়ামের মাত্রা বেশি থাকায় কিডনির রোগীদের অতিরিক্ত লেবু খেতে বারণ করা হয়। ইউরিক অ্যাসিডের রোগীদের ক্ষেত্রেও লেবুর পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত থাকলে ভাল। সরাসরি লেবু খাওয়ার অভ্যেস থাকলে এক সময়ে তা দাঁতের এনামেলকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তা ছাড়া খিদের মুখে শুধু লেবুর রস পেটে গেলে লেবুর সাইট্রিক অ্যাসিডের সঙ্গে পাচকরসে থাকা অ্যাসিড মিলে পাকস্থলীর গাত্রের ক্ষতি করতে পারে, যার জেরে স্টমাক আলসারও হতে পারে।
সর্বগুণসম্পন্ন লেবুতে ‘দোষ’ প্রায় নেই বললেই চলে। তাই ডায়েটে নিয়মিত একটা করে পাতিলেবু রাখতেই পারেন কিন্তু।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url