OrdinaryITPostAd

কচুর পুষ্টিগুণ

 

কচুর পুষ্টিগুণ

১১ এপ্রিল মঙ্গলবার, ২০২৩





কচু খুবই পরিচিত একটি সবজি। এর পাতা শাক হিসেবেও খাওয়া হয়। বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকাতেই কচু জন্মাতে দেখা যায়। গ্রামের বাড়ির আনাচকানাচে ও রাস্তার পাশে অনেক জায়গায় কচু জন্মে। তবে অনেক প্রজাতির কচু আছে, যা যত্নের সঙ্গে চাষ করা হয়ে থাকে। এ ধরনের চাষ করা কচুই আমরা নানা ধরনের রান্নায় ব্যবহার করে থাকি। কচু ডাঙা ও পানি, দুই স্থানেই বেশ সহজে জন্মাতে পারে। তবে মাটিতে জন্ম নেওয়া কচুর সংখ্যাই বেশি। কিছু কচু আছে, যেগুলো বনজঙ্গলে জন্মে থাকে, এগুলো বুনো কচু নামে পরিচিত। এ ধরনের কচু মানুষের খাওয়ার উপযোগী নয়। মানুষের খাওয়ার উপযোগী জাতের মধ্যে মুখিকচু, দুধকচু, মানকচু, পানিকচু, পঞ্চমুখিকচু ও ওলকচু উল্লেখযোগ্য।



কচুর কোনো অংশই ফেলনা নয়, কচুর মূল থেকে শুরু করে, কচুর কাণ্ড, পাতা, ফুল, লতি—সবকিছুই খাওয়ার উপযুক্ত। কচুতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, যা মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী। তবে অনেকেই মনে করেন, কচু খাওয়া বেশ ঝামেলার কাজ, তাই অন্য সব সবজি খেলেও কচু এড়িয়ে চলেন। আগাগোড়া খাওয়া যায় এই সবজির পুষ্টিগুণ অবাক করার মতো।

কচুর মূল উপাদান হলো আয়রন (Fe), যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রেখে শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ ঠিক রাখে। প্রতি ১০০ গ্রাম কচুশাকে ৩৯ গ্রাম প্রোটিন, ৬ দশমিক ৮ গ্রাম শর্করা, ১৫ গ্রাম চর্বি, ২২৭ মিলি গ্রাম ক্যালসিয়াম, ১০ মিলিগ্রাম আয়রন ও ৫৬ মিলিগ্রাম খাদ্যশক্তি থাকে।


কচুশাক


কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ রয়েছে। এটি দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া চোখসম্পর্কিত জটিলতা কমায়। কচুশাকে থাকা স্যাপোনিনস, টেনিনস, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্লাভোনয়েড উচ্চ রক্তচাপ কমায়। কচুর ডাঁটায় প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে, তাই গরমের সময় কচুর ডাঁটা রান্না করে খেলে শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ হয়। নিয়মিত কচুশাক খেলে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকিও কমে। কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, এ কারণে এটি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে কচুশাক। নিয়মিত শাকটি খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। এটি হজমশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে।

কচুশাক যেকোনো ধরনের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, কেননা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান রয়েছে এতে। পুষ্টিবিদদের মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের ক্যালসিয়াম ও লৌহের চাহিদা কচুশাক সহজেই মেটাতে পারে।


কচুর মূল




কচুতে আছে আয়রন, যা রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করে। যাঁদের রক্তশূন্যতা আছে, তাঁরা নিয়মিত কচু খেলে উপকার পাবেন। কচু খেলে রক্তের কোলেস্টেরল কমে, তাই উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য ওল কচুর রস বেশ উপকারী।

নিয়মিত কচু খেলে কোলন ক্যানসার ও স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। জ্বরের সময় রোগীকে দুধকচু রান্না করে খাওয়ালে জ্বর দ্রুত ভালো হয়ে যায়। সব সময় ডাক্তারের পিছু পিছু না দৌড়ে প্রাকৃতিক সুরক্ষা গ্রহণ করা হলো বুদ্ধিমানের কাজ। কচুতে আছে প্রচুর ফাইবার, ফোলেট ও থায়ামিন, যা মানবদেহের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় উপাদান।



কচুর লতি




পুষ্টিবিষয়ক বিজ্ঞানীদের মতে, কচুর লতিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, যা দেহের রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। খেলোয়াড়, গর্ভাবস্থা, বাড়ন্ত শিশু ও কেমোথেরাপি নিচ্ছেন, এমন রোগীদের জন্য কচুর লতি খুবই উপকারী একটি উপাদান। এতে ক্যালসিয়াম পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে, যা দেহের হাড় শক্ত করে ও চুলের ভঙ্গুরতা রোধ করতে সক্ষম। এর মধ্যে ডায়াটারি ফাইবার বা আঁশের পরিমাণ খুব বেশি আছে। এই আঁশ খাবার খুব সহজে হজম করে, দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া যেকোনো বড় ধরনের অপারেশনের পর খাবার হজমে উপকারী পথ্য হিসেবে কাজ করে এই কচুর লতি।


কচুর মুখি





কচুর মুখি একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। এতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, যেমন এ, সি ও বি থাকে। কপার, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, সেলেনিয়াম, পটাশিয়াম, বিটা ক্যারোটিন ও ক্রিপ্টোজেন্থিন নামের খনিজ উপাদান থাকে কচুর মুখিতে। এই উপাদানগুলো ভালো অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, যা রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয় এবং বয়স বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে ধীর করে। এতে প্রোটিনও থাকে এবং এটি গ্লুটেনমুক্ত খাবার।


সাবধানতা


তবে যাঁদের শরীরে অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তাঁদের কচু না খাওয়াই ভালো। কচু খাওয়ার পর কিছুটা বুক জ্বালাপোড়া করতে পারে। তাই যাঁদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে, তাঁদের সতর্ক থাকতে হবে। খাওয়ার পর অ্যাসিডিটির ওষুধ খেয়ে নিলে হবে। কচু রান্না করার আগে কিছু পরিমাণ লেবুর রস, ভিনেগার অথবা তেঁতুল গোলা পানি দিলে অপালেটের দানা দূর করা যায়। আর এই অপালেটের দানা দূর হওয়ার কারণে কচু খেলেও গলা চুলকাবে না।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪