OrdinaryITPostAd

টিউমার ও ক্যান্সারের মধ্যে পার্থক্য কী?

 টিউমার ও ক্যান্সারের মধ্যে পার্থক্য কী?

১৪ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৩




টিউমার এবং ক্যান্সার এমন দুটি শব্দ যা আমরা প্রায়শই আধুনিক দিনের দৈনন্দিন জীবনে শুনে থাকি।  বর্তমান সময়ে ক্যান্সারের ব্যাপক  বিস্তার ঘটেছে। মস্তিষ্ক, স্তন, লিভারসহ নানা ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে লোকজন। আবার অনেকের দেহে টিউমার ধরা পড়ছে। 

যদিও টিউমার এবং ক্যান্সার উভয়ই একে অপরের অনুরূপ বলে মনে হয়, তবে তারা তা নয়।  টিউমার এবং ক্যান্সারের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হ’ল টিউমারটি সৌম্য বা ম্যালিগন্যান্ট হতে পারে যখন ক্যান্সার সাধারণত একটি ম্যালিগন্যান্ট টিউমার দিয়ে শুরু হয়। 

এখানে, আমরা উপস্থাপন করব:

১) টিউমার কি? – সংজ্ঞা, চিকিৎসা 

২) ক্যান্সার কি? – সংজ্ঞা, চিকিৎসা  

৩) টিউমার এবং ক্যান্সারের মধ্যে পার্থক্য কি


১) টিউমার কি ? 

চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়, টিউমার হচ্ছে কিছু অস্বাভাবিক টিস্যুর সমাবেশ, যেখানে কোষগুলো অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সংখ্যা বাড়ায়। টিস্যু মানে একই ধরনের কিছু কোষ, যখন কোথাও এক হয়ে একই ধরনের কাজ করে।

কোষের ধরন ও আচরণ অনুসারে টিউমার দুই ধরনের। বিনাইন (Binain) এবং ম্যালিগনেন্ট (Malignant)। বিনাইন টিউমার বিপজ্জনক নয়। এই টিউমারের বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে – 

  • এটি একটি আবরণ দ্বারা বেষ্টিত
  • ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় 
  • আশপাশে বা শরীরের অন্য কোনো স্থানে এটি  ছড়ায় না
  • অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সম্পূর্ণ ভালো হয় ও স্বভাবতই আর বাড়ে না। 

তবে ম্যালিগনেন্ট টিউমার খুবই বিপজ্জনক। 

  • এটি স্বভাবতই কোনো অবরণ দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে না
  • ফলে বৃদ্ধি হয় অনিয়ন্ত্রিত ও অগোছালভাবে
  • বৃদ্ধি ঘটে দ্রুত, আশপাশের টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়ে
  •  রক্তের মাধ্যমে শরীরের অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। ফলে এই টিউমার থেকে ক্যান্সার সৃষ্টির ঝুঁকি বেশি থাকে।

টিউমারের চিকিৎসা ?

টিউমারের চিকিৎসা বলতে অপারেশন, কেমোথেরাপি বা এই ধরণের উন্নত চিকিৎসা, যেগুলো যথেষ্ট জটিল, ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। তাই টিউমার ভালো করার উপায় বলতে আমাদেরকে  এটি প্রতিরোধ করতে হবে।

 যে সমস্ত বিষয়গুলো মেনে চলার মাধ্যমে আমরা  টিউমার প্রতিরোধ করতে পারি  তা হলো-

১) তামাক সম্পূর্ণরূপে পরিহার করতে  হবে , কারণ তামাক টিউমারের ঝুঁকি খুব বেশি মাত্রায় বৃদ্ধি করে। 

২) স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ , যদিও এটি  টিউমার প্রতিরোধের গ্যারান্টি দিতে পারে না। তবে বিভিন্ন ফল এবং স্বাস্থ্যকর সবজিগুলো টিউমারের ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে দেয়।

৩) শরীরের স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখুন এবং শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকুন, কায়িক শ্রম টিউমার প্রতিরোধে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

৪) সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি টিউমারের অন্যতম কারণ হতে পারে, তাই অতিরিক্ত সূর্যালোক থেকে নিজেকে রক্ষা করুন।

৫) নিরাপদ যৌন অভ্যাস বজায় রাখুন, কারণ অনিয়ন্ত্রিত যৌন মিলনের ফলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়া এবং টিউমারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। 


ক্যান্সার (Cancer) : 



ইন্টারন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ক্যান্সারকে এমন একটি শব্দ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছে যা রোগের জন্য ব্যবহৃত হয় যার মধ্যে অস্বাভাবিক কোষগুলি নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই বিভক্ত হয় এবং নিকটবর্তী টিস্যুগুলিকে আক্রমণ করতে পারে। ক্যান্সার কোষগুলি রক্ত এবং লিম্ফ সিস্টেমের মাধ্যমে শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। 

ক্যান্সার একটি জেনেটিক রোগ যা সেলুলার বিভাগের জন্য দায়ী ডিএনএতে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত অস্বাভাবিকতার কারণে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রেরণ করা যেতে পারে। এছাড়াও, বিভিন্ন পরিবেশগত এজেন্ট, সূর্যরশ্মি থেকে ইউভি আলো, বিকিরণ, তামাকের ধোঁয়া এবং ভাইরাসও ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।


ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়ঃ

ক্যান্সার প্রতিরোধের কিছু  উপায় ধারাবাহিক ভাবে  নিম্নে  উপস্থাপন করা হলো:

১.তামাক গ্রহণ করবেন না (Do not consume Tobacco):

ফুসফুসের যত ধরণের ক্যান্সার আছে তার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কারণ হলো  তামাক সেবন। ধূমপানের ফলে মুখ ও গলা, শ্বাসনালী, মূত্রথলি, অন্ত্রের ক্যান্সার এবং হৃদরোগের মতো মারাত্মক ব্যাধি সৃষ্টি হয়।

২.অতিরিক্ত মদপান করবেন না (Don’t drink too much):

প্রতিদিন সহ্য ক্ষমতার বেশি অতিরিক্ত মদপান করলে লিভার ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কয়েকশোগুণ বেড়ে যায়। এছাড়াও মদপানে যকৃত, খাদ্যনালী, কণ্ঠ, গলনালী ও ফুসফুসের ক্যান্সার হয়ে থাকে। 

৩. প্রতিদিন ব্যায়াম করুন (Exercise every day):

একজন অলস ব্যক্তির ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা পরিশ্রমী ব্যাক্তির চেয়ে ৮২% বেশি। পরিশ্রম করলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে ক্যান্সার কোষ ভালো কোষের সাথে যুদ্ধে সহজে পেরে উঠে না। 

৪.পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করুন (Eat nutritious food):

খাদ্য হলো কোষের পুষ্টির উৎস। দেহের রোগপ্রতিরোধ বৃদ্ধির জন্য যে জৈবরাসায়নিক উপাদান পাওয়া যায় তা খাদ্য থেকেই আসে। তাই খাদ্য গ্রহণের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে খাদ্য যেন মানে ভালো হয় দেখতে ভালো নয়। 

৫.প্রখর রোদ এড়িয়ে চলুন (Avoid strong sunlight) :

প্রখর রোদ শরীরের মেলানোমা এবং ত্বকের ক্যান্সারের জন্য দায়ী। 

৬.ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখুন (Keep weight under control):

ওজন বেড়ে গেলে উচ্চরক্তচাপ সৃষ্টি হয় এসময় ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি কোলন ক্যান্সার, যকৃত ও খাদ্য নালির ক্যান্সারের কারণ। স্তন ক্যান্সারের একটি অন্যতম কারণ অতিরিক্ত ওজন।মেনোপজের পর অতিরিক্ত ওজন জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।


৭.প্রতিবছর ক্যান্সার পরীক্ষা করান (Get screened for cancer every year):

নিয়ম করে নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিবছর ক্যান্সারের পরীক্ষা করান এতে প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার ধরা পরবে। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ ধরা পরলে নিরাময় সহজ হয়,আপনার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়ে। 

৮.লাল মাংস কম খাবেন (Eat less red meat):

লাল মাংসের অতিরিক্ত চর্বি বেশি খেলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। প্রক্রিয়াজাত মাংস নিয়মিত খাওয়া পাকস্থলী ও যকৃতের ক্যান্সারের অন্যতম কারণ।সপ্তাহে ৩ দিন সাদা মাংস মানে মুরগির মাংস খাবেন। খরগোসের মাংস খেতে পারেন।


৯. রান্নায় সময় কম তেল ব্যবহার করুন (Use less oil while cooking):

রান্নার সময় তরকারিতে অতিরিক্ত তেল ব্যবহার স্থূলতার প্রধান কারণ। স্থূলতা আবার স্তন ক্যান্সারের প্রধান কারণ। তাই রান্নায় কম তেল ব্যবহার করতে হবে। ঘি,বাটার, ডালডা,পাম তেল যত কম খাওয়া যায় ততই ভালো।খাবার তেলে না ভেজে সেদ্ধ করে খেতে পারলে ৩০% কোলন ও পাকস্থলীর ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব।

১০. পর্যাপ্ত ঘুমান (Get enough sleep):

প্রতিদিন অন্তত ৬ ঘন্টা ঘুমান। ঘুম কম হলে শরীরের অঙ্গগুলো সজীবতা ফিরে পায়না। ক্লান্ত অঙ্গ কার্সিনোজেন দ্বারা খুব সহজে আক্রান্ত হয়। পর্যাপ্ত ঘুমের ফলে দেহের কোষগুলোর ক্ষয় পুরণ হয় এবং কোষের কার্যক্ষমতা বাড়ে। 

১১. ক্যান্সারের টিকা গ্রহণ করুন (Get a cancer vaccine):

সময়মত জরায়ুমুখ ক্যান্সারের টিকা গ্রহন করুন। এছাড়াও হেপাটাইটিস বি,সি,এ রোগের টিকা গ্রহণ করলে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে।

টিউমার ও ক্যান্সারের মধ্যে পার্থক্যঃ



টিউমার হলো শরীরের অস্বাভাবিক টিস্যু পিন্ড- যার কোষ বৃদ্ধি হয় স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক দ্রুত। টিউমার ও ক্যান্সারের মধ্যে পার্থক্য নিচে আলোচনা করা হয়েছে-

১। ক্যান্সার এমন একটি রোগ যা একজন ব্যক্তির দ্বারা ভুগছে যিনি তার দেহে একটি মারাত্মক টিউমার তৈরি করেছেন। অন্যদিকে, টিউমার কোন রোগ নয়। একটি টিউমার একটি শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন যার ফলে আমাদের দেহে কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে।


২। ক্যান্সার একটি প্রাণঘাতী রোগ এবং তাই ম্যালিগন্যান্ট টিউমার অপসারণের জন্য চিকিৎসা প্রয়োজন।


৩। ক্যান্সারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এর সাথে যুক্ত ম্যালিগন্যান্ট টিউমার সবসময় দ্রুত বর্ধনশীল । অন্যদিকে, একটি টিউমার, যদি এটি সৌম্য হয়, সাধারণত ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং এমনকি এর বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

৪। ক্যান্সার একটি প্রাণঘাতী রোগ যার বেঁচে থাকার হার হ’ল বিকাশযুক্ত ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের ধরন এবং এর অবস্থানের উপর নির্ভর করে।

অন্যদিকে, একটি সৌম্য টিউমার আক্রমণ, ধ্বংস বা প্রতিস্থাপন করে না , এটি কেবল প্রসারিত হয় বা বদল কর।

৫। সব ক্যান্সার টিউমার, কিন্তু সব টিউমার ক্যান্সার নয়।

৬। ক্যান্সারের চেয়ে টিউমারগুলির চিকিৎসার সময়কাল কম লাগে। 


টিউমার বা ক্যান্সার হওয়া মানেই সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু নয় । ক্যান্সার বা টিউমার শরীরের অন্য হাজার রোগের মতোই একটি রোগ বা সমস্যা । বর্তমানে দুটোরই চিকিৎসা আছে । বরং শরীরের কোথাও এমন বাড়তি কোন মাংস পিন্ড, কোনো কারণ ছাড়াই অনেকদিন ধরে অস্বাভাবিকভাবে শরীরের ওজন কমে যাওয়া, দীর্ঘদিন কোনো কারণ ছাড়াই দীর্ঘ সময়  শরীরে দুর্বল অনুভব করা , এমন সব কমন সমস্যার মুখোমুখি হলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪