গাজরের উপকারিতা ও অপকারিতা
গাজরের উপকারিতা ও অপকারিতা
১২ এপ্রিল বুধবার,২০২৩
গাজরের উপকারিতা সর্বজন-প্রশংসিত। এজন্য একে সুপার ফুড বলা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গাজর সালাদ হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। পোলাও, খিচুড়ির সাথে মিশিয়েও গাজর রান্না করা যায়। এছাড়া গাজরের আচার, হালুয়াও দারুণ উপাদেয় খাবার।
গাজরের পুষ্টি উপাদান
গাজরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-কে, ভিটামিন-বি, প্যানটোথেনিক অ্যাসিড, ফোলেট, পটাসিয়াম, আয়রন এবং ফাইবার রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম গাজরে ৮২৮৫ মাইক্রোগ্রাম বিটাক্যারোটিন, ৪১ কিলোক্যালোরি খাদ্যশক্তি, ৩৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১২ মিলিগ্রাম ফসফরাস এবং ১২ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়।
গাজরের নানাবিধ ভেষজ গুণাগুণ
গাজর মূল জাতীয় সবজি। ওজন কমানোর জন্য এটি একটি আদর্শ খাবার।
চলুন, গাজর খাওয়ার কিছু উপকারিতা জেনে নিই-
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে
গাজরে Falcarinol এবং Falcarindiol রয়েছে, যা আমাদের শরীরের এন্ট্রিক্যান্সার উপাদানগুলোকে রিফিল করে। গাজর খেলে ফুসফুস ক্যান্সার, কলোরেক্টাল ক্যান্সার এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। হজমের পর খাদ্যের কিছু উচ্ছিষ্ট আমাদের শরীরে থেকে যায়, যাকে ফ্রি র্যাডিকেলস বা মৌল বলে। এ ফ্রি র্যাডিকেলস শরীরের কিছু কোষ নষ্ট করে। গাজর এ ধরনের মৌলের প্রতিরোধে দারুণ কার্যকর।
দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে
গাজর চোখের রেটিনাতে বেগুনি পিগ্মেট এর সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়ে চোখের ফাংশন ঠিক রাখতে সাহায্য করে। রাতকানা রোগ দূরীকরণে গাজর বেশ উপকারি।
লিভারের সমস্যা সমাধানে
গাজরে প্রচুর পরিমাণে দ্রবণীয় ফাইবার পাওয়া যায় যা মলত্যাগের উদ্দীপনা সৃষ্টি করে লিভার ও কোলনকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন একটি করে গাজর সেবন করলে লিভারে প্রদাহ, ফোলা ভাব ও সংক্রমণ কমে যায়। এটি হেপাটাইটিস, সিরোসিস এবং কোলেস্টেসিসের মতো সমস্যা থেকে লিভারকে রক্ষা করে। গাজর লিভারের পিত্ত এবং হিমায়িত ফ্যাট কমাতেও সাহায্য করে। এটা দেহের অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
অ্যান্টিএজিং হিসেবে
গাজর আমাদের শরীরের অ্যান্টি এজিং উপাদান হিসেবেও কাজ করে। মেটাবলিজমের কারণে শরীরে ক্ষয়প্রাপ্ত সেলগুলিকে ঠিকঠাক করতে গাজর খুব কার্যকর।
সুন্দর ত্বকের জন্য গাজর
গাজর ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর করতে সাহায্য করে। নিয়মিত গাজরের জুস খেলে মুখের দাগ, বয়সের ছাপ দূর হয়ে যায়। এছাড়া গাজরে বিদ্যমান অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এজেন্টস্ ত্বক শুকিয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে, ত্বককে করে তোলে সুস্থ এবং সতেজ।
অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে
কোথাও কেটে বা পুড়ে গেলে সেখানে লাগিয়ে নিন কুচি করা গাজর বা সিদ্ধ করা গাজরের পেস্ট। এতে ইনফেকশনের আশঙ্কা দূর হয়ে যাবে।
ওরাল স্বাস্থ্যসুরক্ষায় গাজর
গাজর মুখের লালা উৎপাদন বাড়ায়। গাজর খাওয়ার সময় আমাদের মুখে ‘সিলভা’ নামক একটি যৌগের নিঃসরণ ঘটে। সিলভা মুখে অ্যাসিডের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং দাঁতের ক্ষয়ের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। নিয়মিত গাজর খেলে দাঁতের মাড়ি শক্ত হয়।
কানের ব্যথার প্রতিকারে
সর্দি-কাশি বা কোনো অসুস্থতার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার কারণে অনেকসময় কানে ব্যথা হয়। কলা, গাজর, আদা এবং রসুন একসাথে পানিতে সেদ্ধ করে ১-২ ফোঁটা কানে ব্যবহার করলে ব্যথা কমে যাবে ইনশা’আল্লাহ ।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে
গাজরের জুস শরীরে ক্ষতিকর জীবাণু, ভাইরাস এবং বিভিন্ন ধরনের প্রদাহের বিরুদ্ধে ভালো কাজ করে। গাজর রক্তও পরিষ্কার করে থাকে। গাজরের স্যুপ ডায়রিয়া নিরাময়ে ভারি উপকারি। কৃমিনাশক হিসেবে গাজর ভালো প্রতিষেধক। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গাজরের সঙ্গে কয়েক কোয়া রসুন মিশিয়ে খান।
হার্টের সুরক্ষায় গাজরের উপকারিতা
গাজর ডায়েটরি ফাইবারে পরিপূর্ণ থাকে। এই উপাদানগুলো ধমনির ওপর কোনো কিছুর আস্তরণ জমতে না দিয়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে, হার্টকে সুস্থ রাখে। গাজরের আলফা ক্যারোটিন ও লুটিন নামক উপাদান হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে
কোলেস্টেরল এবং ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে গাজর দারুণ উপকারি। গাজরের রস দেহে চর্বির মাত্রা কমায়। সে সঙ্গে গাজরে বিদ্যমান ফাইবার কোলন পরিষ্কার রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের হাত থেকে রক্ষা করে। গাজর রক্তের প্রধান উপাদান আরবিসিকে দীর্ঘজীবী করে। ফলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ে। সাথে সাথে গাজর ত্বকে উপকারি কোলেস্টেরলের বা লাইপোপ্রোটিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। গাজরের পুষ্টিগুণ ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বের করে দেয় যা এথারোস্কেলোরোসিস এবং স্ট্রোক এর ঝুঁকি হ্রাস করে।
মস্তিষ্কের সুরক্ষায়
গাজরের হালুয়া শিশুদের বুদ্ধি বিকাশে সাহায্য করে। এবং গাজরের জুস নার্ভাস সিস্টেমকে উন্নত করে ও মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা সমাধানে
ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে এবং শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা(যেমন- অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস এবং এমফিসেমা ইত্যাদি) প্রতিরোধে গাজর খুব উপকারি।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
গাজর রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমিয়ে দেয় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে। তবে কিডনি রোগে আক্রান্ত ও ডায়াবেটিসের রোগীরা মিষ্টি গাজর খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিন।
শক্তি বৃদ্ধিতে
গাজরে দেহের শক্তি ও বিকাশের জন্য আবশ্যকীয় প্রোটিন, শক্তিদায়ক উপাদান চর্বি-ও কার্বো-হাইড্রেট রয়েছে। গাজরের রস সব ধরনের জ্বর, দুর্বলতা, নাড়ি সম্পর্কিত বিকার ইত্যাদির প্রতিকারে কার্যকর ভেষজ ঔষধ।
যেকোনো বড় অস্ত্রোপচারের পর রক্তের ঘাটতি হয়। এই ঘাটতি পূরণে গাজর খুব উপকারি। গাজরে প্রচুর পরিমাণে খনিজ লবণ রয়েছে, যা মানুষের হাড়, দাঁত, নখ সুগঠিত করে।
গর্ভাবস্থায় গাজর খাওয়ার উপকারিতা
নিয়মিত গাজর খেলে গর্ভাবস্থায় আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সহজে কাটিয়ে উঠতে পারবেন। অনেক গর্ভবতী মহিলাই তাদের গর্ভাবস্থায় শিরায় টান লাগা বা পেশী শক্ত হয়ে যাওয়া অনুভব করে থাকতে পারেন। গাজর এসব নানাবিধ সমস্যার ভালো প্রতিষেধক। গাজর অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা প্রতিরোধেও সহায়তা করে।
গাজরে প্রচুর পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে, যা আপনার অনাগত শিশুর হাড় এবং তরুণাস্থির গঠনে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খনিজ। এতে বিদ্যমান ফোলিক অ্যাসিড গর্ভের সন্তানের স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশেও সাহায্য করে।
গাজরের অপকারিতা
- প্রচুর পরিমাণে গাজর গ্রহণের ফলে ত্বকের রং হলুদ হয়ে যায় এবং অল্প বয়সের শিশুদের দাঁতের ক্ষয় হতে পারে।
- গরমে বেশি গাজর খাওয়া এড়িয়ে চলুন, কারণ এতে উচ্চ রক্তচাপ এবং অনিদ্রা দেখা দিতে পারে।
- অনিদ্রা হলে কিভাবে দূর করবেন জেনে নিন।
- অন্ত্রে অতিরিক্ত বিটা ক্যারোটিনের উপস্থিতি ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
- বেশি পরিমাণে গাজর খেলে আপনার গ্যাস, ডায়রিয়া, পেট, পাকস্থলির পাচনজনিত ব্যাধি দেখা দিতে পারে।
- অতিরিক্ত গাজরের রস খাওয়ার ফলে মহিলাদের বুকের দুধের স্বাদ পরিবর্তিত হয়।
- গাজরের উপকারিতা যেমন অনেক তেমনি এটি বছরের সবসময়ই পাওয়া যায়। এটি যথাসম্ভব কাঁচা খাওয়ার চেষ্টা করুন, এতে পরিপূর্ণ ভিটামিন এবং মিনারেলস্ পাবেন। রেফ্রিজারেটরে গাজর সংরক্ষণের সময় অবশ্যই প্লাস্টিকের নরম ব্যাগ ব্যবহার করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url