ওজন কমানো যখন জরুরি
ওজন কমানো যখন জরুরি
মেদ বাড়ার কারণে প্রিয় পোশাক আর পরা যাচ্ছে না- এই কারণে ওজন কমানো নিজের ইচ্ছের ওপর নির্ভর করে।
তবে শারীরিক অবস্থা যখন বিপৎসংকেত দেয় তখন ওজন কমানোর জরুরি হয়ে দাঁড়ায়। আর সার্বিকভাবে সুস্থ থাকতে সেই লক্ষণগুলো জানাও দরকার।
উচ্চ রক্তচাপ:
সাধারণভাবে বাড়তি ওজনের কারণে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে ওষুধ ছাড়াও সুস্থ থাকতে ওজন কমানো জরুরি।
এই বিষয়ে নিউ ইয়র্ক’য়ের ইন্টার্নাল মেডিসিনের চিকিৎসক ও ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবামূলক প্রতিষ্ঠান ‘রো’র ‘মেডিকেল কনটেন্ট’য়ের পরিচালক মাইক বোল বলেন, “ওষুধের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
পাশাপাশি এখানে ওজন কমানো জরুরি।”
ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “তাই পরীক্ষায় যদি ধরা পড়ে উচ্চ রক্তচাপ, বা ঘরে নিজেই যদি পরীক্ষা করে দেখেন প্রায়ই রক্তচাপ বাড়তি তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ মতো চলার পাশাপাশি ওজন কমানোতেও মনযোগী হতে হবে।”
কোলেস্টেরল বেশি বা ডায়াবেটিস
রক্ত পরীক্ষায় যদি ধরা পড়ে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি বা ডায়াবেটিস কিংবা ‘প্রি ডায়াবেটিস’ দেখা দিয়েছে, তবে ওজন কমানো জরুরি হয়ে দাঁড়ায়।
এই ধরনের সমস্যা থেকে বৃক্ক মানে কিডনি নষ্ট হয়, স্নায়ু, চোখ খারাপ হওয়ার পাশাপাশি স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে।
ডা. বোল বলেন, “তবে সুখের বিষয় হল এই সমস্যাগুলো থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায় ওজন কমানোর মাধ্যমে। তাই কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি, ডায়াবেটিস বা প্রি ডায়াবেটিস পরীক্ষায় ধরা পড়লে অবশ্যই ওজন কমাতে হবে।”
নাঁক ডাকা:
‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ অর্থাৎ ঘুমের মধ্যে নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়া আর খোলার সমস্যা খুবই খারাপ লক্ষণ। আর এটা হয় অতিরিক্ত ওজন থেকে।
ডা. বোল বলেন, “স্লিপ অ্যাপনিয়া’ হলে নিরবিচ্ছিন্ন ঘুম হয় না। ফলে দিনে অবসাদ কাজ করে। পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তাই রাতে যদি আপনার ‘ঘড়ঘড়’ নাঁক ডাকার শব্দে পরিবারের লোকদের ঘুমাতে সমস্যা হয় তবে অবশ্যই ওজন কমানোর রাস্তায় নামতে হবে।”
শরীরে টান লাগা:
ডা.বোলের ভাষায়, “বাড়তি ওজন মানে দেহ ভারী হচ্ছে, ফলে শরীরের সব জায়গায় বাড়তি চাপ পড়ছে। বিশেষ করে হাঁড়ের সংযোগস্থলে এবং মেরুদণ্ডে। পাশাপাশি বিভিন্ন পেশিকেও বাড়তি চাপ সামলিয়ে কাজ করতে হয়ে। আর এর ফলাফল হল দেহের বিভিন্ন জায়গায় টান লাগা, বা পেশিতে ব্যথা।”
হাঁটু, কোমরে বা পিঠের নিচের অংশ ছাড়াও শরীরের যে কোনো জায়গায় ব্যথা হওয়ার কোনো কারণ খুঁজে না পাওয়া গেলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার পাশাপাশি বাড়তি ওজনও কমাতে হবে।
দৈনিক কাজে অসুবিধা:
যেসব কাজে অভ্যস্ত, সেসব করতে হঠাৎ যদি অসুবিধা লাগে তবে নিজের দেহের দিকে মনযোগ দেওয়ার সময় হয়েছে।
ডা. বোল বলন, “সাধারণ যত দূর হাঁটতে পারতেন, সেই দূরত্ব অতিক্রম করতে এখন বেগ পেতে হচ্ছে, বা সিঁড়ি বাইতে গিয়ে বেশি দম নিতে হচ্ছে তবে অবশ্যই দেহের ওজনের দিকে নজর দিতে হবে।”
তাহলে যা করণীয়
ওজন কমানোর জরুরি লক্ষণগুলো না হয় জানা হল, এখন করণীয় হল ওজন কমানো। যা কিনা সহজ কথা নয়। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই্ আলসেমি ও দৈনিক ব্যস্ততার কারণে ব্যায়াম করার সময়ও থাকে না।
এই ক্ষেত্রে ডা. বোল বলেন, “রাতারাতি তো আর ওজন কমানো সম্ভব হয় না। ছোট ছোট পদক্ষেপে আগানোই এক্ষেত্রে ভালো। তাই অনুসরণ করা যেতে পারে ‘নন-এক্সসারসাইজ অ্যাক্টিভিটি থার্মোজেনেসিস বা ‘নিট’ পদ্ধতি।”
দৈনিক কাজের মাধ্যমেই এক্ষেত্রে শরীরচর্চার করার পন্থা বের করা হয়। যেমন- হাঁটা, ঘর পরিষ্কার করা।
ডা.. বোল পরামর্শ দেন, “গাড়ি একটু দূরে রেখে হেঁটে অফিসে যাওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে। বা বাস থেকে নেমে অন্য কোনো বাহন না নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হাঁটা যায়। দুতিন বা চারতলাতে উঠতে বা নামতে লিফ্টের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহারে অভ্যস্ত হওয়া, বেশিক্ষণ বসে কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা বা পায়চারি করা, মোবাইলে কথা বলার সময় বসে না থেকে হাঁটতে হাঁটতে কথা বলা- এভাবে বিভিন্ন পন্থায় অলস জীবন থেকে বের হয়ে আসা যায়।”
যদিও এই কাজগুলো দেহের আকৃতিতে আমূল কোনো পরিবর্তন আনবে না। তবে দৈনিক কাজগুলো করে গেলে, একসময় নিজে থেকেই আরও বেশি ওজন কমানোর ক্ষেত্রে উৎসাহ বোধ করবেন। আরও ছোট ছোট পদক্ষেপেই বড় লাফ দেওয়া যায়।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url