OrdinaryITPostAd

রমজানের দ্বিতীয় দশ দিনের আমল ও ফজিলত

 রমজানের দ্বিতীয় দশ দিনের আমল ও ফজিলত

২৪ শে মার্চ শুক্রবার ২০২৩  


চলছে পবিত্র মাহে রমজান মাস। আর এই রমজান মাসকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ১০ দিন রহমতের, দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাতের এবং তৃতীয় ১০ দিন নাজাতের। আজ শেষ রোজার প্রথম ভাগ, মানে রহমতের ১০ দিন। কাল থেকে শুরু হবে মাগফিরতের দশ দিন। অর্থাৎ ১১ থেকে ২০ রোজা পর্যন্ত মাগফিরাত, যার অর্থ ক্ষমা। 


হজরত মুহাম্মদ (সা.)  বলেছেন, রমজান মাসের প্রথম ১০ দিন হলো রহমত, তার দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাত, এর শেষ ১০ দিন হলো নাজাত। সাধারণভাবে বলা হয়ে থাকে, প্রথম ১০ দিন আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের প্রতি রহমত বা দয়া বণ্টন ও বিতরণ করেন। দ্বিতীয় ১০ দিন আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের ক্ষমা করতে থাকবেন। শেষ ১০ দিন আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের জাহান্নাম থেকে নাজাত বা মুক্তি দিতে থাকবেন।

রমজান মাসের মাগফিরাত সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে যা বলা হয়েছে, 'মাগফিরাত শব্দের অর্থ হলো ক্ষমা। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অসংখ্য গুণাবলীর মাঝে অন্যতম একটি গুণ হলো তিনি ক্ষমাশীল। এজন্য আল্লাহ তায়ালার অপর একটি নাম হলো 'আল-গাফুর'। আর 'গাফুর' শব্দের বাংলা অর্থ হলো 'ক্ষমাশীল'। বান্দা যেন তাঁর সারা বছরের কৃত সব গুনাহ থেকে মুক্তি পেতে পারে, এই জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রমজান মাসের দ্বিতীয় ১০ দিনকে মাগফিরাত তথা ক্ষমা লাভের দিন হিসেবে ধার্য করেছেন।'

অতএব, রমজানের দ্বিতীয় ১০ দিন অর্থাৎ মাগফিরাতের ১০ দিন আমাদের করণীয় হলো সর্বোচ্চ ক্ষমা প্রদর্শন করা। মহানবী (সা.) আরো বলেছেন, সকল মানুষ ভুলকারী। আর ভুলকারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো যারা তওবাকারী (বায়হাকি)। 

আল্লাহ তায়ালার ক্ষমাসুলভ নামগুলো হলো আল গফিরু (ক্ষমাশীল), আল গফুরু (ক্ষমাময়), আল গফফারু (সর্বাধিক ক্ষমাকারী), আল আফুউ (মার্জনাকারী), আল খফিদু (বিনয় পছন্দকারী), আশ শাকুরু (কৃতজ্ঞ), আল বাররু (সদাচারী), আল হালিমু (সহিষ্ণু), আস সবুরু (ধৈর্যশীল), আত তাউওয়াবু (তওবা কবুলকারী) ইত্যাদি।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'অপরাধ স্বীকারকারী নিরপরাধ ব্যক্তির মতো।'(বুখারি, মুসলিম ও তিরমিজি)। আপনি ক্ষমা লাভ করেছেন বা ক্ষমার অধিকারী হয়েছেন, তা বোঝা যাবে আপনার আচরণে যদি ক্ষমা প্রকাশিত হয়; নয়তো নয়।

তিনি আরও বলেন, তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে আসো এবং আমার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক না করে থাকো, তাহলে আমিও সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে আসব। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩৫৪০)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'মাহে রমজানের প্রতি রাতেই একজন ফেরেশতা ঘোষণা করতে থাকেন, 'হে পুণ্য অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। হে পাপাচারী! থামো, চোখ খোলো।' তিনি আবার ঘোষণা করেন, 'ক্ষমাপ্রার্থীকে ক্ষমা করা হবে। অনুতপ্তের অনুতাপ গ্রহণ করা হবে। প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কবুল করা হবে।'

এ মাসে আল্লাহর দরবারে মাগফিরাত কামনা করলে, গরিব-দুঃখীদের প্রতি দান-সদকার পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে, নিজে সব ধরনের খারাপ কাজ পরিহার করলে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আসকার, তাসবিহ-তাহলিল, কোরআন তিলাওয়াত ও দোয়া-ইস্তেগফার করলে, মহান আল্লাহ তা অবশ্যই কবুল করেন। 

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'এ মাসে চারটি কাজ অবশ্যকরণীয়। দুটি কাজ এমন যে, তার দ্বারা তোমাদের প্রতিপালক সন্তুষ্ট হন। অবশিষ্ট দুটি এমন, যা ছাড়া তোমাদের কোনো গত্যন্তর নেই। এই চারটির মধ্যে একটি হলো কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করা, দ্বিতীয়টি হলো অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করা। এ দুটি কাজ আল্লাহর দরবারে অতি পছন্দনীয়। তৃতীয় ও চতুর্থ হলো জান্নাত লাভের আশা করা ও জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের প্রার্থনা করা। এ দুটি এমন বিষয়, যা তোমাদের জন্য একান্ত প্রয়োজন।' (ইবনে খুজাইমা)

মাতৃগর্ভ থেকে মানুষ যেভাবে নিষ্পাপ অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়, মাহে রমজানের ৩০ দিন যথাযথভাবে রোজা পালন করলে তেমন নিষ্কলুষ হয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। 

এসব মুমিন বান্দার মাগফিরাত ও নাজাতপ্রাপ্তি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'যারা রমজানের চাঁদের প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত রোজা রেখেছে, তারা সেদিনের মতোই নিষ্পাপ হয়ে যাবে, যেদিন তাদের মাতা তাদের নিষ্পাপরূপে জন্ম দিয়েছেন।'

তিনি আরো বলেছেন, 'যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়ে নিষ্পাপ হতে পারল না, তার মতো হতভাগ্য এই জগতে আর কেউ নেই।' সিয়াম সাধনার মধ্যে কোনো রকম ভুলত্রুটি হয়ে গেলে তৎক্ষণাৎ তওবা ও ইস্তেগফার করে নিজেদের সংশোধন করে নেয়া দরকার।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'আর তিনিই (আল্লাহ) তার বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং পাপগুলো ক্ষমা করে দেন।'(সূরা আশ শুরা: ১৫)

অতএব, মুমিন বান্দাদের উচিত মাগফিরাতের দশকটি আমল-ইবাদত, প্রার্থনা-মোনাজাতে কাটিয়ে আল্লাহ তায়ালার ক্ষমালাভে ধন্য হওয়া। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে আমল করার তৌফিক দান করুন।  

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪