নবজাতকের যত্ন
নবজাতকের যত্ন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক এবং নবজাতক ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ মো. আবদুল মান্নান জানান, শীতকালে নবজাতকের দেহের তাপমাত্রা ধরে রাখার প্রতি মনোযোগী হতে হবে সে ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই।
বিশেষজ্ঞ মো. আবদুল মান্নান বলেন, শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই প্রচলিত কিছু আচরণের কারণে শীতে নবজাতকের অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই শিশুকে গোসল করিয়ে ফেলা আমাদের দেশের চিরাচরিত দৃশ্য। কারণ নবজাতকের দেহে জন্মের পরপরই একপ্রকার সাদা আবরণ দেখা যায়। অনেকেই এটি নোংরা ভেবে মুছে দেন বা গোসল করিয়ে ধুয়ে দেন। কেউ লিকুইড প্যারাফিনেও মুছে ফেলেন। কিন্তু এটি মূলত নবজাতকের সুরক্ষা কবচ।
আরেকটি প্রচলিত আচরণ হলো নাভির নাড়িতে তেল মেখে রোদে রাখা। মনে রাখবেন, এতে সংক্রমণের পথই শুধু তৈরি করা হয়। নাভি থাকবে উন্মুক্ত কিন্তু যেকোনো কিছুর স্পর্শ ছাড়া। বড়জোর ঢোলা সুতির পোশাকে ঢেকে রাখা যাবে। ডায়াপার পরালে তাও থাকবে নাভির নিচে। এক ডায়াপার ৪ ঘণ্টার বেশি কোনোভাবেই রাখা যাবে না।
হাড় শক্ত করতে ও শরীর গরম করতে নবজাতকের শরীরে তেল বা লোশন মালিশ করাটা আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত। অথচ চিকিৎসকরা বলেন, প্রথম এক মাস শিশুকে তেল, সাবান, পাউডার, লোশন, ক্রিম, কালি, কাজল কিছুই ছোঁয়ানো যাবে না।
দুই থেকে তিন মাস পর অলিভ অয়েল বা সরিষার তেল মালিশ করা যেতে পারে। অনেকেই উন্নতমানের ভেবে বিদেশি কোম্পানির তেল, লোশন ব্যবহার করেন। এগুলো আমাদের দেশের আবহাওয়ায় ব্যবহারের উপযোগী কিনা দেখে নিন। এসবে শিশুর অ্যালার্জির আশঙ্কাও থাকে।
কুসুম কুসুম পানিতে গোসল
শীতকালে অন্তত এক মাস নবজাতককে সরাসরি পানিতে গোসল করানো অনুচিত। সময়ের আগে ভূমিষ্ঠ হওয়া বা প্রি-ম্যাচিওরড বেবিকে দুই মাস গোসল করানো ঠিক হবে না। তিন দিন পর কুসুম কুসুম গরম পানিতে শরীর হালকা মুছে দিতে পারেন।
এক মাস বা দুই মাস পর সপ্তাহে এক দিন পানিতে গোসল করানো যাবে। গোসল বা গা মোছানোর পানি প্রথমে ১০ মিনিট ধরে ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপর হালকা কুসুম গরম করে নিতে হবে। পানিতে জীবাণুনাশক তরল মেশানো যাবে না। পানি সূর্যের রোদে গরম করা হলেও হবে না। শিশুর গোসল অবশ্যই বদ্ধ কোনো ঘরে হতে হবে। এর ফলে বাতাসে নবজাতক ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হবে না।
পোশাক হবে কোমল
নবজাতককে সরাসরি উলের পোশাক পরানো ঠিক নয়। চিকিৎসকরা বলেন, উলের ক্ষুদ্র লোমে অ্যালার্জি হতে পারে। সুতির পোশাকের ওপর উলের সোয়েটার চাপাতে পারেন, অন্তত তিন প্রস্থ পোশাক নবজাতককে পরাতে হয়। তা হতে পারে কাঁথা ও কম্বল। অবশ্যই তা হবে শিশুর উপযোগী।
দ্য বেবি শপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা আলী নবজাতকের উপযোগী পোশাক সম্পর্কে জানান, দেশেই পাওয়া যায় নবজাতকের ব্যবহারের উপযোগী পোশাক। এগুলো তৈরি হচ্ছে সুতি, উল ও অন্যান্য উষ্ণ কাপড়ে। নবজাতকের পোশাকের মধ্যে আছে বডি স্যুট ও রম্পার। এগুলোর মাধ্যমে জামা ও প্যান্টের কাজ একসঙ্গে চলবে। আরও আছে বেবি স্যাক। এটি অনেকটা ছালার মতো, কিন্তু কাজ করে কম্বলের।
নবজাতককে সামনে থেকে খোলা যায় এমন পোশাক পরানো উচিত। বেবি স্যাকের সামনে চেইন লাগানো বলে সে সুবিধা পাওয়া যায়। এছাড়া নবজাতককে হাফহাতা বা ফুলহাতা সোয়েটার, টি-শার্টও পরাচ্ছেন অনেকে। শীতে নবজাতককে অবশ্যই হাতমোজা, পা-মোজা ও কানটুপি পরাতে হবে। তবে মনে রাখবেন, নবজাতকের দেহের আচ্ছাদন হিসেবে সুতি ছাড়া অন্য কোনো কাপড় লাগানো উচিত নয়। এত কিছুর পরও যদি ঠাণ্ডা লেগেই যায় নবজাতকের সর্দি মুছতে রাবারের নেজল অ্যাসপিরেটর ব্যবহার করুন এবং দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url