ক্যানসারকে মাড়ির ব্যথা ভেবে ভুল করছেন না তো? তফাৎ দেখুন, সতর্ক হন
ক্যানসারকে মাড়ির ব্যথা ভেবে ভুল করছেন না তো? তফাৎ দেখুন, সতর্ক হন
মাড়ির ক্যানসারকে সামান্য ব্যথা ভেবে ভুল করছেন না তো ? দুটো কিন্তু আলাদা জিনিস, তবে দুটোকেই সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত এবং সঠিক চিকিৎসা করানো দরকার।
মাড়ি লাল হয়ে ফুলে গেছে? বা মাড়িতে হঠাৎ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি দেখতে পাচ্ছেন যেটা আগে ছিল না, তাহলে কিন্তু এটা ক্যান্সার হতে পারে। মাড়ি থেকে হঠাৎ রক্ত পড়লে, বা দাঁত নড়তে শুরু করলেও সচেতন হন। কারণ এটা কিন্তু মাড়ির ক্যান্সারের একটা লক্ষণ হতে পারে।
এটা বলছি না যে মাড়ি ফুলে গেলে বা লাল হলেই সেটা ক্যান্সার। কিন্তু এই ফোলা ভাব যদি ৩-৪ সপ্তাহ থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মাড়ির ক্যান্সার হচ্ছে এক ধরনের মুখের ক্যান্সার।
এটা আদতে ঘাড় বা মাথার ক্যান্সার যার সূচনা হয় যে কোনও একটা মাড়ি দিয়ে যেটা হঠাৎ ফুলতে শুরু করে এবং টিউমার তৈরি করে।
মাড়ির ক্যান্সারের পূর্ব লক্ষণ হচ্ছে মুখের মধ্যে না ঠোঁটের আশপাশে লাল বা সাদাটে ভাব দেখা যাবে। চামড়া অনেক সময় স্বাভাবিকের তুলনায় মোটা হয়ে যায়, এবং মুখের মধ্যে বারবার আলসার বা ফোঁড়া হতে থাকে।
সঙ্গে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। কিন্তু এটাকে অনেকেই সাধারণ মাড়ির ব্যথা বা জ্বলুনি ভেবে ভুল করেন। কিন্তু দুটো জিনিস আলাদা এবং সঠিক চিকিৎসার প্রয়োজন দু ক্ষেত্রেই।
কাদের মাড়ির ক্যান্সার হতে পারে?
যাঁরা অতিরিক্ত পরিমাণে ধূমপান করেন, তামাক বা গুটকা খান, অথবা হুকা টানেন তাঁদেরই মূলত এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
কোন লক্ষণ দেখে বুঝবেন আপনার মাড়ির ক্যান্সার হয়েছে কিনা?
- মুখের মধ্যে কোনও ফোলা ভাব যদি ৩-৪ সপ্তাহেও না কমে
- ঠোঁটের আশপাশে এবং মুখের ভিতর লাল বা সাদা ভাব থাকলে
- দাঁত নড়বড় করলে
- মুখের মধ্যে টিউমার জাতীয় কিছু অনুভব করলে
- কানে এবং মুখে ব্যথা হলে
- চিবোতে বা গিলতে যদি সমস্যা হয়
- হঠাৎ ওজন কমে গেলে
- দাঁত থেকে রক্ত পড়লে
এই মাড়ির ক্যান্সারের একাধিক ধাপ হয়। সঠিক সময় চিকিৎসা শুরু হওয়া প্রয়োজন। দেখে নিন মাড়ির ক্যান্সারের ধাপগুলো।
স্টেজ ০: এই ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধি দেখা যায় মুখে।
স্টেজ ১: মুখের ভিতর যে কোষগুলো বেড়েছিল সেটা ক্যান্সারের কোষে পরিণত হয়েছে। তবে এই স্টেজে এগুলো ছোট আকারে থাকে এবং শরীরের অন্য অংশে ছড়ায় না।
স্টেজ ২: এই স্টেজে টিউমার আরও বড় হয়।
স্টেজ ৩: এই স্টেজে টিউমারটি বাড়তে বাড়তে ৪ সেন্টিমিটার ডায়ামিটারের হয়ে যায় এবং তা ঘাড়ের লিমফ নোডের কাছে পৌঁছে যায়।
স্টেজ ৪: এই স্টেজে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ক্যান্সার ছড়াতে শুরু করে। ফুসফুসে ছড়িয়ে যায় ক্যান্সার।
মাড়ির ক্যান্সার হলে কী করে তা নিরাময় করা যায়?
চিকিৎসা শুরুর আগে কিছু জিনিস দেখা প্রয়োজন, প্রথমত রোগীর স্বাস্থ্য, বয়স সহ ক্যান্সারের উৎস থেকে আর কোন কোন জায়গায় এই রোগ ছড়িয়েছে সেটা দেখে নেওয়া দরকার। ক্যান্সার কতটা ছড়িয়েছে তার উপর নির্ভর করে চিকিৎসা করতে হবে। প্রয়োজন হলে সার্জারি, রেডিয়েশন থেরাপি অথবা কেমোথেরাপি করতে হবে।
১. ম্যান্ডিবুলেক্টমি: এই ক্ষেত্রে মাড়ি থেকে ক্যান্সারাস টিউমার বাদ দেওয়া হয়।
২. পার্শিয়াল ম্যাক্সিলেক্টমি: মূর্ধা অথবা উপরের মাড়িতে থাকা ক্যান্সার এই উপায়ে অপারেশন করে বাদ দেওয়া হয়।
৩. ম্যান্ডিবুলেক্টমি করতে হলে পায়ের হাড়, মূলত ফিবুলা থেকে হাড় নিয়ে মাড়ির হাড় পুনর্গঠন করা হয় মাইক্রোভাসকুলার সার্জারির মাধ্যমে।
৪. ফাইনাল প্যাথোলজি রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে কেমো বা রেডিও থেরাপি হবে কিনা সেটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তাই যত দ্রুত এই রোগ ধরা পড়বে তত সহজেই অপারেশন করা সম্ভব হবে। এবং চিকিৎসার পর সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও বাড়বে। তাই নিয়মিত দাঁত মাজা এবং মুখ পরিষ্কার রাখা জরুরি।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url