হঠাৎ নাক দিয়ে রক্ত পড়ার কতিপয় কারণ ও আমাদের করণীয়
হঠাৎ নাক দিয়ে রক্ত পড়ার কতিপয় কারণ ও আমাদের করণীয়
নাক দিয়ে রক্ত পড়লে আমরা ভাবি হয়তো এটি কোনো অসুখ। যে কোনো বয়সী নারী বা পুরুষের এই ধরণের সমস্যা হতে পারে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এটি একটি সাধারণ সমস্যা হলেও অনেক সময় যা জটিল রোগের উপসর্গ হিসেবে দেখা দিতে পারে। চলুন জেনে নিই এর কারণ ও আমাদের করণীয় সম্পর্কে।
নাক দিয়ে রক্ত পড়া সমস্যাটি প্রায়শয়ই দেখা যায়। সাধারণত ৬০ শতাংশ মানুষ জীবনে কোনো না কোনো সময় নাক দিয়ে রক্ত পড়ার সমস্যার সম্মুখীন হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটি একটি সাধারণ সমস্যা হলেও অনেক সময় এটি জটিল রোগের উপসর্গ হিসেবে দেখা দিতে পারে। চলুন জেনে নিই নাক দিয়ে রক্ত পড়ার কতিপয় কারণ ও আমাদের করণীয় সম্পর্কে।
রক্ত পড়ার বিভিন্ন কারণ
যে কোনো বয়সের নারী অথবা পুরুষ এ সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। নাক দিয়ে রক্ত পড়ার সমস্যাটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। শুধু যে নাক,কান,গলার সমস্যার কারণে নাক দিয়ে রক্ত পড়ে তাই নয় এছাড়াও শরীরের অন্য অনেক রোগের কারণেও নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে। নাক দিয়ে রক্ত পড়ার কিছু কারণ নিম্নে দেওয়া হলো-
ক) কতিপয় সাধারণ কারণ
১। কারও উচ্চরক্তচাপ জনিত সমস্যা থাকলে ।
২। কারও জন্ডিস বা লিভারের প্রদাহ যেমন লিভার সিরোসিসের মতো লিভারের অসুখ থাকলে।
৩। কারও রক্তনালিতে জন্মগত কোন ত্রুটি থাকলেও নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে।
৪। এছাড়া রক্তের বিভিন্ন রোগ, যেমন- অ্যানেমিয়া, হিমোফিলিয়া, থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া, পারপুরা ইত্যাদি থাকলেও নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে।
৫। মহিলাদের মাসিক এবং গর্ভাবস্থায় ও অনেকের এ সমস্যা হতে পারে।
৬। Aspirin জাতীয় ওষুধ সেবন করলেও অনেক সময় নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে।
খ) অন্যান্য কারণ সমূহ
১। কোন কারণে আঘাত পেলে।
২। নাকে অপারেশন হলে।
৩। নাকের সর্দি, সাইনোসাইটিস ইত্যাদি সমস্যা হলে।
৪। নাকের মধ্যে ইনফেকশন যেমন- রাইনাইটিস থাকলে।
৫। নাকের ভিতর টিউমার থাকলে।
৬। নাকের মাঝখানের হাড় অতিরিক্ত বাঁকা হলে।
৭। নাকের মাঝখানের পর্দায় ছিদ্র থাকলে ইত্যাদি।
হঠাৎ নাক দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হলে প্রাথমিক চিকিৎসায় করণীয় :
১। কারও নাক দিয়ে হঠাৎ রক্ত পড়া শুরু হলে তাঁর নাকে চাপ দিয়ে সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে বসাতে হবে। তারপর বৃদ্ধাঙ্গুল ও প্রথম আঙুল দিয়ে নাকের দুই ছিদ্র জোরে বন্ধ করে দিতে হবে। তাকে বলতে হবে মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে এবং আনুমানিক ১০ মিনিট এভাবে ধরে রাখতে হবে। এ সময় কোন অবস্থাতেই আঙ্গুল ছাড়া যাবেনা, প্রয়োজনে হলে আরও বেশিক্ষণ চাপ দিয়ে ধরে রাখতে হবে।
২। সম্ভব হলে এ সময় তার কপালে, নাকের চারপাশে বরফ ধরে রাখুন। মুখের ভেতরে তালুর যে অংশ নাক বরাবর সেখানে বরফ চাপ দিয়ে ধরুন। এর ফলে রক্ত পড়া তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে যাবে।
৩। আর যদি ১৫-২০ মিনিটের পরেও রক্ত পড়া বন্ধ না হয় তাহলে দেরি না করে নিকটস্থ হাসপাতালের নাক কান গলা বিভাগে গিয়ে তাড়াতাড়ি ডাক্তার দেখাতে হবে।
৪। যদি রোগীর অতিরিক্ত রক্তপাত হয় তাহলে তাকে রক্ত দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
চিকিৎসা:
নাক দিয়ে রক্ত পড়ার চিকিৎসা করতে প্রথমে কী কারণে রক্ত পড়ছে সেটি কারণটি প্রথমে নির্ণয় করে তারপর রোগীকে চিকিৎসা দিতে হবে। নাকের সামনের দিক থেকে রক্তপাত হতে থাকলে তা দ্রুত বন্ধ করা যায় তবে পেছন বা ভিতরের দিক থেকে রক্তপাত হলে অনেক ক্ষেত্রে তা বন্ধ করতে বেশ সময় লাগে। নাকের এন্ডোস্কোপির মাধ্যমেও অনেক সময় রক্তপাতের কারণ নির্ণয় করা হয়। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে দায়ী রক্তনালিগুলো বন্ধ করে চিকিৎসা করা হয়। নাকের কারণ ছাড়া অন্যান্য কোন শারীরিক কারণে রক্তপাত হলে সংশ্লিষ্ট রোগের চিকিৎসাও করাতে হবে।
নাক দিয়ে রক্ত পড়া প্রতিরোধে কিছু সাবধানতা:
১। নাক, কান, গলার রোগকে কখনো অবহেলা করা যাবেনা।
২। এছাড়া আগে থেকেই নিজের রক্তের গ্রুপ জেনে রাখুন যাতে জরুরী মুহূর্তে রক্ত দিতে হলে ঝামেলা না হয়।
৩। নাক দিয়ে রক্ত পড়তে থাকলে শোয়া যাবেনা।
৪। অযথা নাকে হাত লাগানোর অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
৫। নিজেদের ও শিশুদের নখ ছোট করে রাখতে হবে।
৬। শুষ্ক মৌসুমে অর্থাৎ শীতকালে নাক যাতে অতিরিক্ত শুষ্ক না হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এজন্য নাকের সামনের দিকে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করা যেতে পারে।
রক্ত দেখলে একটু ভয় পায়না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আর সেটি যদি হয় নিজের নাক দিয়ে তাহলে তো কথাই নেই। সব বয়সের মানুষেরই নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে। তাই অস্থির না হয়ে ধৈর্য্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা উচিত।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url