বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঘূর্ণিঝড়
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঘূর্ণিঝড় কোনটি? অনেকেই এই বিষয় সম্পর্কে জানেনা। তাই আজকের এই পোস্টে আমরা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে আলোচনা করব। বাংলাদেশে অনেক সময় ঘূর্ণিঝড় দেখা যায়। কিছু আছে যা ছোট ছোট এবং কিছু আছে যা ভয়ঙ্কর রূপে দেখা দেয় বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়। এখন আমরা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে জানব
পেজ সূচিপত্রঃ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঘূর্ণিঝড়
- বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঘূর্ণিঝড়ঃ উপস্থাপনা
- ঘূর্ণিঝড় কেন হয়
- বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঘূর্ণিঝড়
- বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কিছু ঘূর্ণিঝড়
- শেষ কথাঃ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঘূর্ণিঝড়
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঘূর্ণিঝড়ঃ উপস্থাপনা
ঘূর্ণিঝড় হল একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বিশেষ করে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল গুলোতে ঘূর্ণিঝড় বেশি হয়ে থাকে। এটি সমুদ্র থেকে উৎপন্ন হয়ে ধীরে ধীরে ভূমির দিকে এগিয়ে আসে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে অনেকগুলো ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। যেগুলো কিছু পরিমাণ রয়েছে ছোট তাতে কোন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি কিন্তু অনেকগুলো ঘূর্ণিঝড় হয়েছে যেগুলো বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রচুর পরিমাণ ক্ষতি করেছে। এই পোস্টে আমরা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে আলোচনা করব।
ঘূর্ণিঝড় কেন হয়?
মহাসমুদ্রে বিষুবীয় অঞ্চলে আদ্র এবং উষ্ণ বাতাস মহাসাগরের পৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে উঠে যায়। তখন ওই স্থানে বায়ুশূন্য হয়ে পড়ে। যার ফলে আশেপাশের এলাকা থেকে বায়ু অতি দ্রুত এসে শূন্যস্থান পূরণ করতে চাই। যার ফলে একটা গতি এবং বাতাসের সৃষ্টি হয়।
আরো পড়ুনঃ মেঘ কিভাবে বৃষ্টি তে পরিণত হয় - মেঘ থেকে কিভাবে বৃষ্টি হয়
একইভাবে বায়ু আবার উপরের দিকে উঠে যায় এবং এভাবে চক্রাকারে চলতে থাকে। উষ্ণ বাতাস উপরে উঠে ঠান্ডা হওয়ার কারণে বাতাসে পানির অণুগুলো জমাট বেঁধে মেঘের তৈরি হয়। ক্রমাগত এই অবস্থা হওয়ার ফলে একটি ঘূর্ণন এর সৃষ্টি হয়। ঘূর্ণন বাতাস এবং মেঘ নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে আবার শক্তি সঞ্চয় করতে থাকে।
সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা এখানকার জ্বালানি রূপে কাজ করে। কারণ তাপমাত্রার ফলেই বাতাস উষ্ণ হয়ে উপর দিকে উঠে যায় আর এই কারনেই আশেপাশের বায়ু ফাঁকা জায়গাটা পূরণ করার জন্য প্রচুর পরিমাণে বেগে ছুটে আসতে থাকে। যার ফলে ঘূর্ণিঝড় হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঘূর্ণিঝড়
ঝড় বৃষ্টি ঘূর্ণিঝড় তাপ ইত্যাদি সবকিছু হলো প্রাকৃতিক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। যেগুলোর মাঝে মানুষের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। প্রকৃতি নিজের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন সময়ে উত্তাল হয়ে ওঠে। এর অন্যতম একটি রূপ হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়। পৃথিবীতে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৮০ টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। আজকে আমরা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে জানব।
ভোলা সাইক্লোন - বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঘূর্ণিঝড়
বাংলাদেশে তো বটে বিশ্বের ইতিহাসে ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতা দেখা দিয়েছিল ভোলা সাইকেলনে। যুদ্ধের পূর্ববর্তী বছর ১৯৭০ সালে ভোলা সাইক্লোন সংঘটিত হয়। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রায় ২০৫ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হচ্ছিল। বাংলাদেশের প্রায় ৫ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল।
দ্য গ্রেট বাকেরগঞ্জ সাইক্লোন - বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঘূর্ণিঝড়
ব্রিটিশ শাসন আমলের সময় এই ঘূর্ণিঝড়টি ১৮৭৬ সালে বরিশালের বাকেরগঞ্জ আঘাত হানে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম একটি ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ছিল। ঘূর্ণিঝড়ে ২ লাখ এর বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। এই ঘূর্ণিঝড় প্রায়ই ঘন্টায় ২২০ কিলোমিটার বেগে অতিবাহিত হচ্ছিল। এ সময় সমুদ্রের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ২০ ফুট ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এসময় উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়।
সিডর - বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঘূর্ণিঝড়
এই ঘূর্ণিঝড়ের কথা বাংলাদেশের মানুষ এখনো ভুলতে পারিনি। এই ঘূর্ণিঝড়টি ২০০৭ সালের ১৫ই নভেম্বর সংগঠিত হয়। এই ঝড়ের বেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ২৬০ কিলোমিটার। সমুদ্রের পানি স্বাভাবিকের চাইতে ১০-১২ ফুট উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল প্রচুর পরিমাণে জল হচ্ছিল উপকূলীয় অঞ্চল ভেসে গিয়েছিল। এই ঘূর্ণিঝড়টি চোখের আকৃতি এর নাম সিডর রাখা হয়। এটি একটি শ্রীলংকান শব্দ যার অর্থ চোখ। এই ঘূর্ণিঝড়ে ২ হাজার ২১৭ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল।
আরো পড়ুনঃ বেস্ট ছোট করার ১০ টি প্রাকৃতিক উপায় - বেস্ট ছোট করার ঘরোয়া উপায়
আটাশির ঘূর্ণিঝড় - বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঘূর্ণিঝড়
এই ঘূর্ণিঝড়টি ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশে আঘাত হানে। এর ফলে বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় যা বাংলাদেশের ইতিহাসে ভয়াবহতম বন্যা হিসেবে পরিচিত। এর কারণে বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ৫ হাজার ৭০৮ জন প্রাণ হারায়।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কিছু ঘূর্ণিঝড়
আমরা ইতিমধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে আলোচনা করেছি। ঘূর্ণিঝড় পুরোটাই প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এখানে মানুষের কোন দায় বদ্ধতা থাকেনা কিন্তু এর জন্য অবশ্যই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর আমাদের ঘূর্ণিঝড় হওয়ার আগে থেকেই সতর্ক বার্তা দিয়ে থাকেন।
১। ভোলা সাইক্লোন - ১৯৭০ঃ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আগের বছর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ভোলা সাইক্লোন আঘাত হানে। যার ফলে প্রচুর পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রায় ৫ লক্ষ্য মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমান পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘূর্ণিঝড়ের সবচেয়ে বড় এবং বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করার রেকর্ড এটি।
২। দ্য গ্রেট বাকেরগঞ্জ সাইক্লোন - ১৮৭৬ঃ এই ঘূর্ণিঝড়টি ১৮৭৬ সালের অক্টোবর মাসে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হেনেছিল। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষয়ক্ষতি করা ঘূর্ণিঝড়। এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ২ লক্ষ্য মানুষ মৃত্যুবরণ করেন।
৩। চট্টগ্রাম সাইক্লোন - ১৮৯৭ঃ এই ঘূর্ণিঝড়টি ১৮৯৭ সালে চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চল এবং গ্রাম অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। সেবা এবং ভালোমতো চিকিৎসা না পাওয়ায় অনেক মানুষ মৃত্যুবরণ করেন।
৪। সাইক্লোন - ১৯৬০ঃ এ ঘূর্ণিঝড় টি ১৯৬০ সালে আঘাত হানে। যার ঘন্টায় গতি ছিল প্রায় ২১০ কিলোমিটার। এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ৫,১৪৯ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করেন।
৫। সাইক্লোন - ১৯৬১ঃ এই ঘূর্ণিঝড়টি ১৯৬১ সালে খুলনা এবং বাগেরহাট অঞ্চলে আঘাত হানে। যার ঘন্টায় গতিশীল প্রায় ১৬১ কিলোমিটার। এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ১১,৪৬৮ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করেন।
৬। সাইক্লোন - ১৯৬৩ঃ ১৯৬৩ এই ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের নোয়াখালী কক্সবাজার কুতুবদিয়া-মহেশখালী দ্বীপগুলোতে আঘাত হানে। এই ঘূর্ণিঝড়ের ঝড়ের গতি ছিল ঘণ্টায় ২২৩ কিলোমিটার। যার ফলে ১১,৫২০ জন মানুষ প্রাণ হারায়।
৭। ডিসেম্বর সাইক্লোন - ১৯৬৫ঃ ১৯৬৫ সালের ডিসেম্বর মাসের এই ঘূর্ণিঝড় উপকূলীয় এলাকা কক্সবাজার ও পটুয়াখালীতে আঘাত হানে। যার গতি ছিল প্রায় ঘন্টায় ২১৭ কিলোমিটার। এবং এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ১৯,২৭৯ জন মৃত্যুবরণ করেন।
আরো পড়ুনঃ ভবিষ্যতে কম্পিউটার কেমন হবে? ভবিষ্যৎ কম্পিউটার বিজ্ঞান
৮। বাংলাদেশ সাইক্লোন - ১৯৯১ঃ ১৯৯১ সালের ৩১ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত সময় ধরে এ ঘূর্ণিঝড় চলতে থাকে। এই ঘূর্ণিঝড় পটুয়াখালী-বরিশাল চট্টগ্রামেও নোয়াখালীতে ১১০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ১ লক্ষ ৪০ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। এবং এর ফলে ১.৫ বিলিয়ন টাকার ক্ষতি হয়েছিল।
শেষ কথাঃ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঘূর্ণিঝড়
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে আলোচনা করেছি। এর সাথে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কিছু ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আশা করি আপনি আমাদের এই আর্টিকেল থেকে ঘূর্ণিঝড় কেন হয় এই সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এতক্ষন আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম তথ্যমূলক পোস্ট আরো পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন। ১৬৮৩০
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url